আমার এক বন্ধু আছে, ফিলিস্তিনি। ওর নাম হল হোমাম। খুব
ভাল ছেলে, সবাইকে সন্মান দিয়ে ‘আপনি’ করে কথা বলে। ওর সাথে পরিচয় এআইইউবি’তে এসে, এই
বছরের শুরুতে। কয়েক মাস আগে ও কি একটা কাজে খুলনায় গিয়েছিল, তখন আমিও ছিলাম
খুলনাতে। চলে আসার দিন ও আমার সাথেই ছিল প্রায় সারাদিন, আমার বাড়ীতেও গিয়েছিল।
অনেক বিষয়ে কথা হল সেদিন, ভার্সিটিতে এত কথা বলা হয়নি কখনও।
ওদের আসল বাড়ী হল গাজা’তে। কিন্তু সেখানে
থাকার মত পরিবেশ একদমই নেই। সারাক্ষণ খালি যুদ্ধ, চারিদিকে খালি মৃত্যু। ওর
পরিবারের সবাই এজন্য অনেক জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ওরা বেশ অনেকগুলো ভাই, ওরা তিন
ভাই থাকে বাংলাদেশে, ষ্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে। ওদের সবার বড় ভাইটা থাকে দুবাইতে। ওর
আব্বা-আম্মা থাকেন আরব-আমিরাতে, ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে। আমি কথায় কথায় ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে এই ওয়ার্ক
পারমিট বা ষ্টুডেন্ট ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ওরা কি করবে? ও বলল যে কিছু একটা
উপায় তার আগেই বের করতে হবে। আমি বললাম যে তাহলে কি ওরা কোনদিন নিজের জায়গায় ফিরে
যাবে না। ও মুখটা খুব করুণ করে বলল, সেখানে আমাদের জন্য কিছুই নেই। যদি আমাদের
সেখানে ফিরে যেতে হয় তার অর্থ নিশ্চিত মৃত্যু। আমার খুবই মন খারাপ হল এটা শুনে। এই
জীবনতো আমি কল্পনাও করতে পারি না। সারাজীবন এখানে সেখানে যাযাববের মত কাটিয়ে দিতে
হবে, চাইলেও নিজের জন্মভূমিতে ফিরে যেতে পারব না। এ কেমন জীবন!
ইস্রায়েল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ-রাজনীতি নিয়ে আমার জ্ঞান খুব
বেশী নয়। তবে আমি যা বুঝি তা হল এটা মানুষের জন্য কোন সুফল বয়ে আনতে পারেনি। শুধু
কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য মানুষের স্বাভাবিক জীবন, তাদের বাপ-দাদাদের ভিটেমাটি, তাদের
বেঁচে থাকার শেষ সম্বলটুকু, এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের স্মৃতিটুকু পর্যন্ত।
এই রকম একটা সময়ে আমি লেমন ট্রি মুভিটা দেখি। এই
মুভিটা দেখা অনেকটা ওদের দুঃখ-কষ্টগুলোকে ছুঁয়ে দেখার মত। অতি সাধারণ একটি ঘটনা
অসাধারন হয়ে উঠেছে ইরান রিকলিসের দুর্দান্ত পরিচালনায়, সাথে যোগ হয়েছে হাইয়াম
আব্বাসের অভিনয় শৈলীর যাদুর স্পর্শ। মুভিটির ভাষা আরবি এবং হিব্রু।
রিলিজ হয়েছে ২০০৮ সালে।
এই মুভির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে ইস্রায়েল-প্যালেষ্টাইন
বর্ডার অঞ্চলের এক গরিব বিধবা সালমা জিদান ও উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত তার একটি
লেবুর বাগানকে কেন্দ্র করে। তার সাথে দেখানো হয়েছে ইস্রায়েলী ডিফেন্স মিনিষ্টারের
পরিবার কে, বিশেষ করে তার স্ত্রীকে। পুরো মুভিতে এই দুই মহিলার মধ্যে বলতে গেলে
কোন ডায়লগই নেই, কিন্তু তাদের মধ্যকার পরিস্থিতি, সঙ্ঘাত, পারিবারিক অবস্থা
ইত্যাদি বিষয় তাদের মধ্যে যে সম্পর্কের জন্ম দিয়েছে তা মুভিটিকে
দিয়েছে একটি ভিন্ন মাত্রা। অপরদিকে ডিফেন্স মিনিষ্টার এবং তার সিকিউরিটি সার্ভিসকে
দেখানো হয়েছে বিপক্ষ শক্তি হিসেবে।
মূল ঘটনাপ্রবাহ ছাড়াও আলাদা কিছু বিষয় মুভিটিতে উঠে
এসেছে। সমাজে এমন কিছু লোক থাকে যারা নীতিকথা আওড়াতে পিছপা নয়, কিন্তু মানুষকে
সত্যিকার সাহায্য করার বেলায় তারা থাকে না।
লেবুর বাগান নিয়ে মামলা চলাকালে সালমা ও তার উকিলের
মধ্যকার সম্পর্কের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে মানুষের স্বপ্ন দেখার স্বাভাবিক প্রবৃতি।
আবার সেই সম্পর্কের ব্যর্থ পরিণতির মাধ্যমে দেখান হয়েছে সালমার চারিত্রিক দৃঢ়তার
স্বরূপ। এই মুভিটি তৈরি হয়েছে একটি সত্যি ঘটনার উপর ভিত্তি করে।
আশা করি যারা ভাল মুভি দেখতে পছন্দ করেন তারা কেউ এটা
দেখে নিরাশ হবেন না। টরেন্ট থেকে ডাউনলোড করতে চাইলে তা করতে পারবেন এখান থেকে।
এটা আমার প্রথম মুভি রিভিউ। যদি কেউ পড়ে বিরক্ত হন তাহলে
ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
অরিন্দম গুস্তাভো
বিশ্বাস
২৭শে নভেম্বর ২০১০
ঢাকা