এরশাদ ভাই আর্টসেল ছেড়ে দিচ্ছেন এই খবরটা এসেছিল গতবছরের মে মাসে। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম যে আর্টসেল আর সেই আগের আর্টসেল থাকছে না। প্রায় এক বছর পর ফেসবুকে অন্য ব্যান্ড মেম্বারদের অফিশিয়াল ঘোষণার ভিডিওটির মাধ্যমে জানা গেল আর্টসেল ব্যান্ড ভেঙ্গে যাচ্ছে। আমি কলেজ লাইফ থেকে আর্টসেল শুনতে শুনতে বড় হয়েছি, তাই এই ব্যাপারটা মেনে নেওয়া আমার জন্য বেশ কষ্টকর। এরশাদ ভাইয়ের আর্টসেল ছেড়ে দেবার খবরটা পাবার পর আর্টসেলকে নিয়ে এই লেখাটি লিখেছিলাম। এরশাদ ভাইকে নিয়ে লিখলেও এটা আসলে আমার জীবনে আর্টসেলের গল্প। আর্টসেল ভেঙ্গে যাওয়ার খবরটা পাওয়ার পর এই লেখাটার কথা আবার মনে পড়ে গেল। কিছু ফেলে আসা স্মৃতি মানুষকে চিরকাল আবেগাপ্লুত করে, আমার জীবনে আর্টসেল তেমনি একটা সুখস্মৃতি। RIP আর্টসেল!
সালটা ২০০৩। আমি নতুন নতুন
ঢাকাতে এসেছি। নটরডেম কলেজে ভর্তি হতে পেরেছি বলে চলাফেরাতে কিছুটা এক্সট্রা হাবভাব।
থাকি আসাদ গেটের একটা হোষ্টেলে। খুলনা সেন্ট জোসেফসের ষ্টুডেন্ট ছিলাম বলে ঢাকা সেন্ট
জোসেফসের ‘জোসেফাইট’দের সাথে আমার চলাফেরা। ওদের মুখে প্রথম ‘আর্টসেল’ আর ‘ব্ল্যাক’
এই দুইটা ব্যান্ডের নাম আমি শুনেছিলাম।
তখনও আমি এদের গান শুনিনি।
তখনও গান যোগাড় করে শোনা বেশ কষ্টকর ব্যাপার ছিল। ক্যাসেটে গান শোনার ব্যাপারটা তখনও
উবে যায়নি। ছোটবেলা থেকে হেমন্ত, মান্না, কিশোর, সন্ধ্যা – এই সব প্রচুর গান শুনে বড়
হয়েছি। বাড়িতে ছিল নানান আর্টিষ্টদের মেলা। গায়ক, বাদক, নৃত্যশিল্পীতে আমার নানাবাড়ি
ভর্তি ছিল।
প্রথম ইংরেজী গান শোনার ব্যাপারটা
খুব মনে পড়ে। আমি মনেহয় তখন সিক্স এ পড়ি, যশোরে তখন। বেষ্ট অফ রিচার্ড মার্ক্স নামের
একটা ক্যাসেট কোত্থেকে জানি আমাদের বাসায় এসে পড়েছিল। ঐ ক্যাসেটটাতে বি সাইড এর লাষ্ট
গানটা ছিল ‘রাইট হিয়ার ওয়েটিং’ – এই গানটাই আমার বাজিয়ে শোনা প্রথম ইংরেজী গান। আম্মু
রাগ করে কিনা এই ভয়তে অল্প ভলিউম দিয়ে প্লেয়ারের কাছে কান নিয়ে এই গানটা আমি বহুবার
শুনেছি। পরে আস্তে আস্তে বাকী গানগুলাও শুনে ফেলেছিলাম। ‘হোল্ড অন টু দ্যা নাইটস’ বলে
একটা গান অনেক পছন্দ হয়েছিল মনে আছে। আরও বছর দুই পরে আমার এক প্রাইভেট টিউটর আমাকে
একটা ‘এভারগ্রীন লাভ সং’ এর ক্যাসেট দিয়েছিলেন শুনতে। জর্জ মাইকেলের ‘কেয়ারলেস হুয়িস্পার’
বলে গানটা ছিল ঐ ক্যাসেটে। আর একটা গান ছিল যেটা ছিল আমার ফেভারিট। নাম খুব সম্ভব
‘ইফ আই নেভার সি ইউ এগেন’। আর্টিষ্ট এর নাম ভুলে গেছি।
যাইহোক এসএসসি পরীক্ষা দেবার
পরে বাবা আমাকে একটা কম্পিউটার কিনে দিয়েছিলেন। পেন্টিয়াম এমএমএক্স প্রসেসর। হার্ডডিস্ক
৩.৫ জিবি। সেকেন্ড হ্যান্ড। সেইটাই আমার প্রথম কম্পিউটার। তখন কার কাছে থেকে যেন একটা
এমপিথ্রি এনে কপি করেছিলাম। তার মধ্যে মেটালিকা, আইরন মেইডেন, প্যানটেরা এই ধরণের কিছু
ব্যান্ডের ১০-১৫টা করে গান ছিল। মেটালিকা ফোল্ডারটায় গানের নাম ছিল না, ট্র্যাক ১-ট্র্যাক
২ এইভাবে ছিল।তাই গানের নাম জানার কোন উপায় ছিল না। দুইটা গান খুব শুনতাম। পরে জেনেছিলাম
যে একটা ছিল ‘নাথিং এলস ম্যাটারস’ আর আরেকটা ‘মাষ্টার অফ পাপেটস’। প্যানটেরার ‘সিমেট্রি
গেইটস’ গানটা ছিল খুব পছন্দের।
তখনও ইন্টারনেট বস্তুটা আমার
ঠিক বোধগম্য না। আমার এক বন্ধু ছিল, নাম সিয়াম। ওর কাছে থেকে আমি প্রথম ই-মেইল, গুগল
এই ব্যাপারগুলা শিখেছিলাম। খুলনা নিউমার্কেটে ‘গ্রীন সাইবার ক্যাফে’ নামে একটা সাইবার
ক্যাফে ছিল। সেখানে বসে উইকিপিডিয়ার মেটালিকা পেজটা আমি বহুবার পড়েছি। তাই ঢাকা আসার
আগে আমার মেটাল গানের দৌড় ওই পর্যন্তই ছিল।
যাই হোক, ঢাকার কথায় ফিরে
আসি। হোষ্টেলে এক বড়ভাই ছিল। তার নাম সুমন, খুব ভাল গিটার বাজায়। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
ভাই, আর্টসেলের গান শুনছেন? হ্যাঁ, শুনেছি। তাহলে আমাকে শুনান। ওনার একটা সিডি ওয়াকম্যান
ছিল। আমার শোনা আর্টসেলের প্রথম গান ‘দুঃখ বিলাস’ আমি ওটা দিয়েই শুনেছিলাম। ওনার কাছে
শুধু অনুশীলন এ্যালবামটাই ছিল। তাই ঐ একটার বেশী শোনা হলনা। (পরবর্তীকালে আমি সুমনদা’র
কাছেই গিটার শিখেছিলাম, আর সুমনদা পরে শিখত এরশাদ ভাইয়ের কাছে। সেই সুবাদে এরশাদ ভাইয়ের
অনেক লেসন আমার শেখার সুযোগ হয়েছিল।)
কয়েকদিন পর আরেক বড়ভাইয়ের
সাথে পরিচয় হল, তার নাম ডোনাল্ড। সে আমাকে জানাল, আরে আর্টসেলের গান শুনো নাই? আমার
ঘরে বইসা শোন। ‘অন্যসময়’ এ্যামবামটা শুনলাম। মনে মনে ভাবি, সুমনদা’র ঘরে কি শুনলাম
আর এখন কি শুনতেছি?এরা তো মেটালিকা টাইপ গান গায়। শোনা শেষ হলে পর ডোনাল্ডদা বলল, আরে
লিংকন তো আমার ক্লাশমেট, তেঁজগাও কলেজে আমরা একই ব্যাচ। আমি বলি, লিংকনটা কে? ডোনাল্ডদা
হা কইরা থাকল কিছুসময়। পরে বলে, আর্টসেলের ভোকাল।
ডোনাল্ডদার ব্রিফিং এর জোরে
আমি ক্রমে আর্টসেল বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠতে লাগলাম। রিফ শব্দটা আগে জানতাম না, এখন জানলাম।
লিংকন গান গায় আর রিফ বাজায়, এরশাদ লিড বাজায়, সেজান বেইস আর সাজু ড্রামস।
এদিকে কলেজে দেখি মোটামুটি
দুইটা পক্ষ তৈরী হইছে। একদল আর্টসেলের সাপোর্টার, আরেকদল ব্ল্যাকের। কোন কনসার্টে কে
কি ভুল করছে এই নিয়ে তুমুল আলোচনা। কলেজে আমার এক বন্ধু ছিল, নাম মাইক। সে আবার ড্রামস
শিখত আর্টসেলের সাজু ভাই এর কাছে। আরেকজন ছিল, নাম নিতুন, যে বেইস গিটার শিখত ব্ল্যাকের
মিরাজ ভাই এর কাছে। যাইহোক, আমি আর্টসেলের দলভুক্ত হলাম।
আমি প্রথম আর্টসেলের কনসার্ট
দেখি ২০০৩ সালের শেষে অথবা ২০০৪ এর শুরুতে। রমনা ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট এ। দানবের
মত এক বিরাট ছেলে গিটার বাজাচ্ছে আর সাথে গান গাচ্ছে, আর সাথে খুব মাথা ঝাঁকাচ্ছে।
থুতনিতে দাঁড়ি, ঝাকড়া চুল। তার বামপাশে অপেক্ষাকৃত লম্বা একটা ছেলে, নড়াচড়া করছে কম,
কিন্তু চরম স্পিডে লিড বাজিয়ে যাচ্ছে। ডানদিকে খুব সুন্দর দেখতে একজন, দারুণ স্মার্ট,
সে বেইজ বাজাচ্ছে। ড্রামারকে ভাল দেখা যায় না, কিন্তু বোঝা যায় তার চুল লম্বা। আমি
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গেলাম। কনসার্টের পরে ডোনাল্ডদার সুবাদে আর্টসেলের সাথে আমার পরিচয়
হল। আমার পরিচয় দেয়া হল নতুন ভক্ত বলে। আমি তো লজ্জায় লাল। আরও আগে কেন আর্টসেলের গান শুনি নাই এই লজ্জা আমি কোথায় লুকাই?
এরপরে আমি একটা এমপিথ্রি প্লেয়ার
কিনেছিলাম। ১২৮ মেগাবাইট স্পেস। সেইটা দিয়ে সারাদিন শুধু আর্টসেল আর মেটালিকা শুনতাম।
গান চেঞ্জ করতে হলে ক্যাফেতে যেতে হত। ঢাকায় আমার কোন কম্পিউটার ছিল না। সেই দিনগুলা
এখন চিন্তা করলেও অবাক লাগে। কলেজের কম্পিউটার সাবজেক্টের প্রজেক্ট আমি ক্যাফেতে বসে
করেছিলাম। প্রতিদিন কাজ করে ফ্লপিতে সেভ করে আনতাম।
এরপর বহুবার বহু জায়গাতে আমি
আর্টসেলের কনসার্ট দেখেছি। আমার দেখা আর্টসেলের বেষ্ট কনসার্ট আমি দেখি ২০০৪ এর অক্টোবরে,
শিল্পকলা একাডেমীতে। এরশাদ ভাই আমার দুই হাত দূরত্বের মধ্যে দাঁড়িয়ে বাজিয়েছিল। ইচ্ছে
করলেই ছুঁয়ে দেওয়া যাবে এমন অবস্থা। অর্থহীনের সুমন ভাইও একই জায়গায় দাঁড়িয়ে বাজিয়েছিলেন।
আমি হা করে ছিলাম, বেইস গিটার এইভাবে বাজাতে পারে কোন মানুষ? এই কনসার্টে গিয়ে একটা
ঘটনা শুনেছিলাম, সত্যি-মিথ্যা জানিনা। ঘটনাটা এরকম – ‘কিছুদিন আগে বুয়েটের র্যাগ-ডে
অথবা অন্য কোন একটা অনুষ্ঠানে আর্টসেল পারফর্ম করেছিল। বুয়েটের ষ্টুডেন্টরা আর্টসেল
লেখা একটা মাথার ফেট্টি ডিজাইন করেছিল। তো সেই ফেট্টি আর্টসেলের মেম্বারদেরও একটা করে
দেওয়া হয়েছিল। ‘পথচলা’ গানটা বাজানোর আগে এরশাদ ভাই নাকি সেটা কপাল থেকে টেনে চোখের
উপরে এনে সেই অবস্থায় পুরাটা গান বাজিয়েছে’। আমি মনে মনে ভাবি, ইস্ এমনটা একবার যদি
দেখতে পেতাম! আরেকটা কথাও তখন প্রচলিত ছিল, যে এরশাদ ভাইয়ের গিটারটার দাম নাকি ১ লাখ
৪৭ হাজার। এটাও শোনা কথা অবশ্য, ভেরিফাইড না।
২য় এ্যালবাম অনিকেত প্রান্তর
রিলিজ হওয়ার কথাটা খুব ভাল মনে আছে। তখন কলেজ শেষ করে আমি খুলনাতে। প্রথম দিনে পাওয়া
যায়নি, খুলনা আসতে ২দিন দেরী হয়েছিল। তাতেই মনেহয় কষ্টের শেষ ছিলনা। এ্যালবামটা এখনও
আছে। আগে আগে শোনার জন্য সে কি উত্তেজনা, যেন না শুনলে ফুরিয়ে যাবে। এখন বয়স হয়ত কিছুটা
বেড়েছে, কিন্তু সেই উত্তেজনাগুলো ম্লান হয়নি এতটুকু!
গ্রাজুয়েশনের জন্য আমি ব্যাঙ্গালোরে
যাই ২০০৬ সালে। সেইখানে আমার রুমমেট ছিল ওয়েষ্ট বেঙ্গলের কিছু ছেলে। এরা আমাকে ফসিলস্
এর গান শুনায় আর বলে দেখেছিস বাংলা ব্যান্ড কত ভাল মেটাল বাজায়? আমি মনে মনে বলি লোল!
ঠোঁট উল্টায়ে বলি ‘এহ, আইছে! বাংলাদেশের বেশীরভাগ ব্যান্ডই অনেক ভাল বাজায়, ভাল জিনিস
শুনো নাই তাই এইগুলা এত ভাল লাগতেছে। আর্টসেল বলে একটা ব্যান্ড আছে, শুনলে মনে করবা
যে বাংলাতে মেটালিকার গান শুনতেছ’। এই নিয়ে লেগে গেল বিশাল তর্কাতর্কি। শেষে আমি বললাম
যে নেক্সটে বাড়ি গেলে নিয়ে আসব শুনলেই বুঝতে পারবা তোমরা সবাই। ততদিন এই ফসিলস্ না
শুনে মেটালিকা শুনতে থাক। পরেরবার আমার গানের কালেকশন নিয়ে গেলাম আমার নতুন কেনা ল্যাপটপে
করে। কয়েকদিন শোনার পরে কারও মুখে কোন কথা নাই। পরে একদিন বলে ‘তোরা তো আসলেই অনেক
বেশী ভাল বাজাস রে’। গর্বে আমার বুক ফুলে ওঠে। আমি মনে মনে বলি, বাংলাদেশের নাম শুনলেই
খারাপ মনে হয় তাইনা? এইবার বোঝ কেমন লাগে! পরের দিকে আমার নন-বাঙ্গালী বন্ধুরাও আর্টসেলের
গান অনেক পছন্দ করত, আমি অনুবাদ করে করে বুঝিয়ে দিতাম। ব্যাঙ্গালোরের সবচেয়ে স্মরণীয়
ঘটনা হচ্ছে ২০০৭ এর নভেম্বরে ‘স্করপিয়নস্’ এর লাইভ কনসার্ট দেখা।
দেশে ফেরার পর আর্টসেলের কনসার্ট
আবার দেখি এপ্রিল ১৬, ২০১০ মহিলা কমপ্লেক্সে। এর পরে অনেকবার যেতে চেয়েছি। এখন চাকরি
করি, নিজের টাকায় চলি, তাই নিয়ে নানান প্রবলেম। টাকায় হয়না, সময়ে মেলেনা। তখন কি জানতাম
যে আমি আর কোনদিন সেই আর্টসেলকে দেখতে পাবনা যেই আর্টসেলকে আমি দেখেছিলাম আজ থেকে ৮
বছর আগে।এই এপ্রিলেও ‘এবিসি জেনারেশন রিলোডেড’ কনসার্টের পোষ্টার দেখেছিলাম। তখন একটা
সমস্যার জন্য চাকরি ছেড়েছি, হাত একদম খালি। এখন মনে হচ্ছে, ইস! কেন যে গেলাম না! আফসোস!
আমি এই কথা কেন বলছি সেটা
যারা খবরটা পেয়েছেন তারা তো জানেনই। যারা জানেননা তাদের জন্য বলছি – এরশাদ ভাই আর আর্টসেলের
সাথে বাজাবেন না। গত দুইদিন আগে আর্টসেলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে নিচের লেখাটা পোষ্ট
করা হয়ঃ
Dear Fans and Friends, this is undoubtedly the most difficult announcement we had to make in our 12 years music career. We regret to inform you that our founder member and lead guitarist, Ershad Uz Zaman, will no longer be continuing with the band. This is a band's decision which seem to be shocking but truly this was probably pending for the last few years as Ershad has been very busy with other priorities in life, over music, over Artcell. Nevertheless, Ershad has not only been a member of the band but more of a brother to the rest and that make this even more difficult for us. As you know we are in the middle of recording our third album and this decision has left us wondering whether to continue with the 3rd Album project with a new lead guitarist or call it a day for Artcell. But one thing is for sure, Artcell will never be the same withour Ershad. So, we wish him all the best and regards to you all; Shaju, Cezanne and Lincoln
গত দুইদিন ধরে মনটা কেমন যেন
খারাপ। কিছুই ঠিক ভাল লাগছে না। ফেসবুকে ঢুকলেও ঘুরে ফিরে আর্টসেলের পেজে ছবি দেখে
সময় কাটাচ্ছি না হয় আর্টসেলের গান শুনছি। মনের ভেতর কে যেন বারবার বলছে – আর হবেনা
আর হবেনা! এ এক অদ্ভুত অনুভূতি।
গানের আমি তুমি হারিয়ে যাব,
মেঘের পরে মেঘে স্মৃতির ঘরে,
সময় ভেঙ্গে ভেঙ্গে ভেঙ্গে,
অন্য রোদের অন্য সময়ে…
এরশাদ ভাইয়ের জন্য আমার অনুভূতির
প্রকাশ নিচের ছোট্ট প্যারাটিঃ
ভুলজন্মের
কোন এক ধূসর সময়। ঘুণে খাওয়া রোদ অতিক্রম করে হেঁটে যাই আমরা।
সারিবদ্ধ কৃত্রিম মানুষ হেঁটে চলি কোন
এক অপ্সরীর সন্ধানে। ছেঁড়া আকাশের নীচে পাথর বাগান থমকে থাকে। রাহুর গ্রাসে
আমাদের এই গন্তব্যহীন পথচলা বিরতি
পায় খানিকক্ষণ। ‘বাংলাদেশ - স্মৃতি ও আমরা’ খোদাই করা শহীদ স্মরণীর মোড়ের
স্মৃতিস্মারকটা ভেঙ্গে পড়ে। অন্ধকারে শোনা
যায় শুধু ছায়ার নিনাদ। অদেখা স্বর্গের পথে নির্দেশ আসে, কান্ডারী হুঁশিয়ার। চিলে কোঠার সেপাইরা প্রস্তুত হয়। শুরু হয় অস্তিত্বের দিকে পদধ্বনির সন্মোহন। আজ এই বিদায়ে কোন দুঃখ বিলাস নয়,
বসে থাকা শুধু হুঙ্কারের অপেক্ষায়। মুখোশ পরা আমরা অবশ অনুভূতির দেয়াল অতিক্রম করে বসে থাকি অলস সময়ের পারে। শুধু লীন
হয়ে যাওয়ার আগে শেষবার ছুঁয়ে দেখতে চাই বিদায়ী তোমাকে। জানি উৎসবের উৎসাহে
আর জন্ম নেবেনা কোন স্বপ্নের কোরাস। অন্যসময়ের ইতিহাস শুধু রূপক হয়ে বেঁচে
থাকবে অনিকেত প্রান্তরে।
ভাল থাকবেন এরশাদ ভাই। সামনের
জীবনেও আপনার সাফল্য কামনা করছি। আশা করি হঠাৎ কোনদিন দেখা হয়ে যাবে আপনার সাথে। ইউ
উইল বি মিসড্।।
অরিন্দম
গুস্তাভো বিশ্বাস
২২ মে ২০১২
ঢাকা