পৃষ্ঠাসমূহ

১১ মার্চ, ২০১৩

উইড়া যায় রে পক্ষী তার পইড়া থাকে ছায়া



ওর সাথে আলাদাভাবে বসে ঠিক কথা হয়নি কোনদিন।

ওকে আমি চিনতাম, ও আমাকে চিনত। আমার খুব কাছের একটা বান্ধবী তানির বন্ধু ছিল ও, সেভাবেই পরিচয়। আমাকে অরিন নামে ডাকত ও। দেখা হলেই বলত, 'এই অরিন, কেমন আছিস রে?'। আমাদের মধ্যে তুই-তুকারি সম্পর্ক ছিল। ও বেশীরভাগ কথা শুরু করত এইভাবে, 'এই শোন...'। ওর সাথে আর দেখা হবেনা, ও একইভাবে আর কিছু শোনাতে চাইবে না কোনদিন।

কিছুক্ষণ আগে মনে পড়ল। ওর সাথে শেষবার দেখা হয়েছিল সাত রাস্তার মোড়ে, সেটাও বহুদিন আগে। সেদিনও ও ছিল একই রকম ছটফটে। চৌধুরী মামা'র চায়ের দোকানের সামনে যে ফাঁকা মত জায়গাটা আছে, সেখানে দাঁড়িয়ে আমরা সবাই চা খেয়েছিলাম সেদিন। সন্ধ্যা হয়ে এসেছিল, দোকানপাটে জ্বলে ওঠা বাল্বের লাল আলোতে ওর চশমার কাঁচটা ঝকমক করছিল, এখনও চোখ বন্ধ করলে আমি যেন দেখতে পাই। ও চলে যেতে চাইলে আমি বলেছিলাম, 'আরেহ, পরে যাইস'। ও বলল, 'না রে, বাসায় যেতে হবে'। শেষবারের মত চলে গিয়েছিল ও।

ওর বাসায় যাওয়ার লম্বা গলিটায় একটা কাঠগোলাপ ফুলের গাছ ছিল। সুগন্ধে সারাক্ষণ মাতাল হয়ে থাকত জায়গাটা। এখনও আছে কিনা জানিনা, ঐ রাস্তা ধরে যাওয়া হয়নি বহুদিন। হয়ত আর যাওয়ার দরকারও পড়বে না কখনও। ও নিজেও ওখান দিয়ে আর হাঁটবে না কোনদিন।

কোন এক বছরে তানির পরীক্ষার সময় বিএল কলেজে একবার দেখা হয়েছিল ওর সাথে। দোতলার উপরে জানালা দিয়ে উচ্চস্বরে 'তানি, তানি...' বলে ডাকছিল ও। এখন প্রাণপন চিৎকার করেও ওকে আর কিছু শোনানো যাবে না। ও এখন ঠান্ডা পাথর। ওকে আজ পাওয়া গেছে ঢাকা মেডিকেলের মর্গে।

ও একটা ভাল প্রেম করার জন্য মরিয়া ছিল। কিন্তু বিধি-বাম, প্রেম পাওয়ার অযোগ্য ছেলেগুলাই ওর ভাগ্যে এসে জুটতো। ও হয়ত একটু বোকাও ছিল, কাকে ভালবাসতে হবে বুঝতো না। সেজন্যেই মনেহয় বোকার মত অভিমান করে ভুলপথে হারিয়ে গেল।

তানি যখন প্রেমঘটিত ব্যাপারে মামা বাড়ী থেকে চলে এল, তখন ওর বাসাতেই উঠেছিল প্রথমে। কথা ছিল ও আর তানি একসাথে ফ্যাশন ডিজাইনিং পড়তে আসবে ঢাকায়। তানি আসতে পারেনি, ও এসেছিল। হয়ত চলে যাবার জন্যই এসেছিল।

ওর ঢাকায় আসার খবর আমি জানতাম, ও কোন এলাকায় থাকে সেটাও জানতাম। যোগাযোগের চেষ্টা করিনি কখনও। কিছুটা অলসতা, কিছুটা সময়ের অভাব। ব্যস্ত নগর জীবন। এইতো সেদিনও তানি বলছিল ঢাকায় আসলে প্রথমে ওর ওখানে ওঠার কথা। ওদের দু'জনের আর কোনদিন দেখা হবে না। ও আর কখনও ফিরবে না।

মাঝে শুনেছিলাম ঢাকাতে এক ছেলের সাথে প্রেম করছে ও, ছেলেটা নাকি বেশী সুবিধার না। অনেকেই বুঝিয়েছে ওকে, বোকাটা শুনতেই চায়নি কারও কথা। কিছুদিন আগে ঘুমের ওষুধ খেয়ে কি কান্ডটাই না করল ও! কিন্তু আজ ও সত্যি সত্যিই ঘুমিয়ে গেছে চিরদিনের মত।

কিছুক্ষণ আগে তানি ফোন করেছিল। খবরটা বলল। কাঁদছে। অনেকের কথাই বলল। সবাই কাঁদছে। আমি শুধু থম মেরে আছি। আমার চোখ কাঁদছে না, অক্ষম ক্রোধে কী-বোর্ডের উপরে আমার আবেগী মনটা কাঁদছে।

ওর নাম ছিল আশু, ভাল নাম আয়েশা সুলতানা। ওর সাথে আলাদাভাবে বসে ঠিক কথা হয়নি কোনদিন।।


[কিছুটা অপ্রকৃতস্থ অবস্থায় লেখা। অসংলগ্নতা ও ভুলত্রুটি মার্জনীয়]



অরিন্দম গুস্তাভো বিশ্বাস
১১ মার্চ ২০১৩
ঢাকা
সময়ঃ দুপুর ২টা থেকে ৪টার মধ্যে