সেদিন প্রবল বর্ষণে চারিদিক অন্ধকার। আষাঢ় যেন পূর্ণোদ্যমে নেমে এসেছিল আকাশ ফুঁড়ে। হঠাৎ বৃষ্টির গন্ধে মাতাল পরিবেশ। বাইরে মানুষপাখিরা দিশেহারা। ওপাশের নারিকেল গাছগুলো যেন তীব্র বাতাসে মাটি ছুঁতে চাইছিল। শক্তিশালী বিজলি চমকে সারা আকাশ ভয়ানক সাদা আলোয় আলোকিত হয়ে যাবার পরমুহূর্তেই গুড়গুড় শব্দে কোন দানব যেন প্রকৃতিকে ভেঙে ফেলছিল প্রচণ্ড আক্রোশে। বাড়িতে সেদিন ছিল না কেউ। পরিবার গেছে সপ্তাহখানেকের জন্য অন্য একটি শহরে বিয়েতে যোগ দিতে। অফিসের ব্যস্ততায় থেকে গেছি আমি। কাজের মানুষগুলো সব যে যার মত আরাম করে ঝিমুচ্ছে এই বৃষ্টিস্নাত দুপুরে। এই দূর্যোগের মধ্যে কলিংবেলের আওয়াজে প্রথমে কিছুটা বিরক্তই হয়েছিলাম। দরজা খুলতেই পিয়ন বাড়িয়ে দিল একটি পার্সেল, তার সাথে সাঁটা একটি সস্তা খাম। ধন্যবাদ দিয়ে সেগুলো নিয়ে এলাম। পার্সেলটা রেখে খামটাই হাতে তুলে নিলাম প্রথমে। অতঃপর সেই খাম থেকেই বেরুল সংক্ষিপ্ত চিঠিটি। সংক্ষিপ্ত হলেও মূল সংবাদ তাতে পরিষ্কার।
চোখ বন্ধ করলেই এখনও যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে সেইসব দিনগুলো। ফেলে আসা মধুর সময় যেন ডানা মেলে মুক্তির আনন্দে। আমাদের অমলেন্দু, আমার বন্ধু অমলেন্দু সোম। অতি দূর সমুদ্রের তীরে রেখে আসা আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের নিরীহ-পাগলাটে ছেলেটি। মলিন প্যান্টের সাথে পরে থাকা ধূসর শার্টের হাতাটা নিয়মিত কয়েক প্যাচ গুটিয়ে তুলে দিত কনুইয়ের উপর। এর সাথে ধুলোমাখা স্যান্ডেল আর মাথাভর্তি এলোমেলো চুলগুলি সম্পর্কে উদাসীন অমলেন্দু কত কিছুই না করতে চেয়েছিল এ নশ্বর জীবনে! সন্ধান করেছিল অন্য এক জীবনের। জীবনের কোন এক অনালোকিত অর্থের।
খুব বেশী কিছু চায়নি অমলেন্দু। ও শুধু মাটির গান শুনতে চেয়েছিল, অন্ধকারকে ধরতে চেয়েছিল আপন মুঠোর ভেতর। পথহারা কোন চঞ্চল পাখির ঝরা পালকের মত হাওয়ার ভেলায় ভেসে উড়ে যেতে চেয়েছিল আকাশের ওপারে মেঘের দেশে। দেখতে চেয়েছিল অভিমানী শিউলিফুলের বিস্তীর্ণ কার্পেট। শীতের রাতে ওম পাবার জন্য প্রজ্জ্বলিত অগ্নিকুণ্ডের ঝাঁঝালো ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মত পাক খেয়ে ঘন কুয়াশা ছুঁয়ে মিশে যেতে চেয়েছিল নিশীথের অন্ধকারে। হেঁটে যেতে চেয়েছিল সুদূর দিগন্তরেখায়, যেখানে মেরুন সন্ধ্যালোকের সম্মোহনী আলোতে আকাশ-মাটির মিলনরেখা চুমে শিশিরের শব্দের মত সন্ধ্যা আসে। তারপর ফড়িংগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়, ঘরে ফেরে চড়ুই দম্পতি। শরতের কাশবনের কোমলতা স্পর্শ করে ব্যস্ত মেঘগুলোর সাথে মিতালি পাতিয়ে পাখা মেলে দলবেঁধে উড়ে যায় ক্লান্ত বুনোহাঁস। তারপর এক ধবল কুয়াশাঢাকা ভোরে কল্পলোকের চাবি পকেটে নিয়ে অমলেন্দুও ফিরতে চেয়েছিল কোন শিশিরভেজা পথে হেঁটে।
মাঝে মাঝে ডিপার্টমেন্টের বারান্দায় বসে চানাচুর চিবুতে চিবুতে অথবা মধুর ক্যান্টিনের ধোঁয়াওঠা গরম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে এসব চাওয়া-পাওয়ার হিসেব মেলাতো অমলেন্দু। আমরা হাসতাম, বলতাম— 'কী সব যে তুই বলিস পাগলের মত!' মুখে রহস্য এনে ও বলত— 'এসব তোরা বুঝবি না, সেইখানে দারুচিনি-বনানীর ফাঁকে নির্জনতা আছে।' কথাটা বলেই চিরচেনা অমায়িক হাসিটা হাসত অমলেন্দু। স্বপ্নগুলো যেন উজ্জ্বল হয়ে ফুটে উঠত ওর চোখের তারায়।
কোন এক অজানা কারণে বন্ধুদের মধ্যে আমাকেই একটু বেশী পছন্দ করত চাপা স্বভাবের অমলেন্দু। নিজের গোপন কথাগুলো কেমন যেন নিজের সাথে কথোপকথনের মতই নিঃসঙ্কোচে বলে যেত আপন মনে। এসবের কোন কারণ আমি খুঁজিনি তখন! আজ মনে হয় ও হয়ত একজন মানুষকে হলেও জানিয়ে যেতে চেয়েছিল ওর মনের তপ্ত মরুভূমির বিষাদমাখা রোদ্দুরের কবিতা। তবে নিজের বাড়ির কথা খুব বেশী কিছু বলেনি কোনদিন। আমরা শুধু জানতাম ওর বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। এসব কথা উঠলেই কেমন বিড়বিড় করে উঠত অমলেন্দু— 'মানুষ চলে যায়, মুছে যায়— নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়।'
আমরা দু'জন মাঝে মাঝে জ্যোত্স্না দেখতে যেতাম একসাথে। অমলেন্দুই নিজ উদ্যোগে ধরে নিয়ে যেত আমাকে। উদ্দেশ্যহীনভাবে হেঁটে নীলক্ষেত থেকে সন্ধ্যা লাগিয়ে আমরা ফিরতাম ভার্সিটির দিকে। সরলরৈখিক রাস্তাটার মেহগনি গাছের সারির শেষ বিন্দুতে রূপোর থালার মত বড়সড় চাঁদটা শব্দহীন ঝুলে থাকত। হঠাৎ হঠাৎ হারিয়ে যেত আড়ালে, আবার উঁকি দিত পাতাহীন গাছের নিষ্প্রাণ ডালপালার ফাঁক গলে। এক অদ্ভুত মাদকতায় আচ্ছন্ন হয়ে যেতাম আমরা, কেমন যেন অবচেতন স্বপ্নঘোরে চাঁদটার সাথে সাথে হেঁটে যেতাম আবছায়া পথ ধরে। অমলেন্দু গুণগুণ করে মহীনের সুর ভাঁজত— 'রানওয়ে জুড়ে পড়ে আছে শুধু কেউনেইশূন্যতা, আকাশে এখন থমকিয়ে আছে মেঘ...'। আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত বসে থাকতাম কলাভবনের সামনের ফুটপাতে। মাথায় খেলা করত কত-শত ভাবনার বুদ্বুদ। কি হবে এ জীবনে? কিছু কি করতে পারব? জাগতিক সফলতার লাভ-ক্ষতির কোন পক্ষে থাকব শেষপর্যন্ত? অমলেন্দুকে সেগুলো বলেও ফেলতাম মাঝে মাঝে। অমলেন্দু স্বভাবজাত ভঙ্গিতে নির্লিপ্ত উত্তর দিত— 'অর্থ নয়, কীর্তি নয়, স্বচ্ছলতা নয়— আরো এক বিপন্ন বিস্ময়।' কিন্তু কি সেই বিপন্ন বিস্ময়? আমি বুঝতাম না। এতবছর পরে এসে মনে হয়, অমলেন্দু হয়ত ঠিক বুঝেছিল।
এমনি কোন এক সন্ধ্যারাতে একহারা গড়নের সেই মেয়েটিকে প্রথম দেখেছিলাম আমরা। তখন শীতকাল। কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে এ সবুজ পৃথিবী। গাছগুলো সব পাতাশূন্য উলঙ্গ হয়ে পড়ে আছে, ঘাসগুলো ভিজে আছে শীতল শিশিরে। চাঁদের আলো কুয়াশাকে আলোকিত করে মুঠোভর্তি ধূসর ছায়া ছড়িয়ে দিয়েছে চারিদিকে। ভেজা রাস্তায় পা ফেলে আমরা দু'জন এগুচ্ছি। অমলেন্দু আপন মনে আবৃত্তি করে চলেছে— 'অতন্দ্রিলা, ঘুমোওনি জানি, তাই চুপি চুপি গাঢ় রাত্রে শুয়ে, বলি, শোনো... অতন্দ্রিলা... অতন্দ্রিলা...।' কবিতার তাল কাটার শব্দে মুখ ফেরাই। অমলেন্দুর দৃষ্টি নিবদ্ধ রাস্তার অপর পাশে। মেয়েটি হেঁটে আসে কুয়াশা ভেদ করে বেরিয়ে আসা ভোরের প্রথম সূর্যকিরণের মতন। সাদামাটা শ্যামলা মেয়েটি, হালকা সবুজ শাড়ী পরনে, তার উপরে পাতলা সোয়েটার। বুকের উপর কিছু নোটবুক জাপটে ধরা। মুখের দিকে চাইলেই কেন যেন মনে হয় সেখানে জমে আছে এক ভীষণ ক্লান্তিকর দিনের আবেশ। মাটির দিকে তাকিয়ে সে হেঁটে যায় ধীরপায়ে, বাঁক ঘুরে হারিয়ে যায় রোকেয়া হলের দিকে। অমলেন্দু ফিসফিস করে— 'অতন্দ্রিলা... অতন্দ্রিলা...।'
এই ঘটনার আগে থেকেই কবিতা লিখত অমলেন্দু। এবার প্রেমের কবিতায় ভর্তি হতে শুরু করল ওর ক্লাশের নোটবুক, পাঠ্যবইয়ের ব্যাক-কভার। সেগুলোতে প্রেমিকার মেটাফোর হয়ে গিয়েছিল 'অতন্দ্রিলা' নামের কোন এক নারী। ঠিক যেন 'কবিতা লিখেছি কবে, দু-জনের চকিত চেতনায়।' বসন্তের বিকেলে কোকিলের কুহু কুহু রবের সঙ্গে তাল মিলিয়ে অমলেন্দু ওর খাতা থেকে আমাকে পড়ে শোনাত সেই আরাধ্য প্রেমিকার উদ্দেশ্যে উৎসর্গীত কবিতা। ও আমাকে বলেনি কোনদিন, আমি শুনেছিলাম অন্যদের কাছে। অমলেন্দু সত্যিই লজ্জার পাহাড় ডিঙিয়ে সেই 'অতন্দ্রিলা'-কে জানিয়েছিল তার প্রেমের কথা। রাজি হয়নি মেয়েটি। আমি বুঝি, ওটাই হয়ত স্বাভাবিক ছিল তখন। মফস্বল থেকে নিম্নমধ্যবিত্ত মেয়েরা রাজধানীতে লেখাপড়া করতে আসে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার স্বপ্নডানায় চড়ে, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের সুতীব্র বাসনা নিয়ে। অমলেন্দুর মত বোহেমিয়ান, উদ্দেশ্যহীন মানুষের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে নিম্নমধ্যবিত্তের আজন্ম লালিত স্বপ্নকে কেউ ধূলিসাৎ করে দিতে চাইবে না। অমলেন্দু খুঁটি হতে শেখেনি, হতে চায়ওনি কোনদিন। তবে মেয়েটির আচরণ স্বাভাবিক হলেও আমি অবাক হয়েছিলাম অমলেন্দুর গোপনতায়। মনে হয়েছিল প্রেমটাকে ও নিজের ভেতর লালন করতে চায় কোন একান্ত প্রকোষ্ঠে, খাতার শূন্য পাতাগুলো অকৃপণ হাতে ভরিয়ে তুলে খুঁজতে চায় বিরহবেদনার আশ্রয়। যদিও ওর প্রেমের উষ্ণতায় ফোটেনি কোন বকুল ফুল, পৌষের হাওয়ায় ঢেউ খেলেনি কচি সবুজ ঘাসের প্রান্তরে, পাহাড়ী নদীর ধারে পাইন গাছের ছায়াটা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে গেছে হেলে পড়া বিকেলে— অমলেন্দুর একতরফা ভালবাসা থামেনি, কবিতার কলম খোঁজেনি কোন মরুদ্যান।
পাশ করার পর জীবিকার প্রয়োজনে সংবিগ্ন পাখিদের মত আমরা ছড়িয়ে পড়েছিলাম দ্রুত। ছুটতে শুরু করেছিলাম সাফল্যের ইঁদুরদৌড়ে। আমি উত্তরবঙ্গে চলে এসেছিলাম একটা সরকারী চাকরি নিয়ে। অমলেন্দু অত তাড়াতাড়ি কোথাও যেতে চায়নি। জীবনের লক্ষ্যে হেঁটে হেঁটে পৌঁছুবার সময় ছিল ওর, পৌঁছে অপেক্ষা করবার অবসর ছিল। জেনেছিলাম অমলেন্দু চাকরি নিয়েছে কোন একটা পত্রিকা অফিসে। প্রথম প্রথম ওর সাথে যোগাযোগ থাকলেও সেটা ক্ষীণতর হয়ে এসেছিল সময়ের সাথে। তবে কয়েকবছর পর একদিন দেখাই হয়ে গিয়েছিল হঠাৎ, ঢাকাতেই। আমার সাথে দেখা হতেই মলিন চোখজোড়া উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল ওর, নিমেষে মেতে উঠেছিল ভার্সিটি জীবনের স্মৃতিরোমন্থনে। আমি বোকার মত প্রশ্ন করে ফেলেছিলাম— 'এখন কি করছিস অমলেন্দু?' মুহূর্তে থমকে গিয়েছিল ও, কথা হারিয়ে ফেলেছিল যেন। তারপর সেই পুরনো হাসিটা ঠোঁটে ফিরিয়ে এনে বলেছিল— 'কিচ্ছু না রে! আমি তো এক গভীরভাবে অচল মানুষ। হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে, নক্ষত্রের নিচে।' এরপর আর কথা জমেনি তেমন। ব্যস্ততার কারণে উঠতে হয়েছিল আমাকেও।
তারপর কেটে গেছে প্রায় এক যুগ। জাগতিক যাত্রায় আমি প্রতিদিন আরও ব্যস্ত হয়ে গেছি নিজেকে নিয়ে, নিজের পরিবারকে নিয়ে। ধীরে ধীরে প্রতিদিনকার সেই কলাভবনের বয়স বেড়ে গেছে, মেহগনি গাছগুলো পরিণত হয়েছে মহীরুহে, এমনকি স্মৃতির চকচকে চাঁদটাও নিষ্প্রভ হয়ে এসেছে ক্রমশ। অমলেন্দুর খবর নেওয়া হয়ে ওঠেনি আর। সেই অমলেন্দু আজ নিজেই ফিরে এসেছে খবর হয়ে। পুরু তামাটে কাগজের পার্সেল হয়ে পড়ে আছে আমার টেবিলের উপর।
ঘোরগ্রস্থের মত এগিয়ে যাই। কাঁপা হাতে পার্সেলটি তুলে নেই। খুলে ফেলি অতি সাবধানে। বের হয়ে আসে নীল মলাটের একটি অতি পুরাতন নোটবুক। অমলেন্দুর কবিতার খাতা। সময় যেন হঠাৎ স্থির হয়ে যায় আমার মাথার ভেতর। আমাকে ঘিরে ফেলে কিছু পরাবাস্তব মেঘ। কেমন আশ্চর্য এক অনুভূতি হয় হৃদয়ের অলিন্দে। চলে যাওয়ার আগে অমলেন্দু ওর অস্তিত্বটাকেই যেন দিয়ে গেছে আমাকে। প্রথম পাতাটা খুলি, যেন স্মৃতির দরজার মরিচা পড়া তালা খুলে যায়। উৎসর্গের মত করে লেখা দুইটি লাইন—
'রূপোলী মাছ পাথর ঝরাতে ঝরাতে চলে গেলে
একবার তুমি ভালবাসতে চেষ্টা করো।'
নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি। রূপোলী মাছ পাথর ঝরাতে ভুলে গেছে সেই কবে। জোড়াশালিক ফিরে গেছে ঘরে, ভীষণ অন্ধকারে। তারপর রাত বেড়েছে। রাত বাড়ছে। আমি নিজের অজান্তেই খাতাটা শক্ত করে ধরে থাকি। যেন একটু শিথিলতা পেলেই সেটা রঙিন প্রজাপতি হয়ে উড়াল দেবে শব্দহীন বাতাসে ভর করে। অতীতের সাথে বসে থাকি আরও কিছুক্ষণ। স্মৃতির মুখোমুখি আরও কিছুটা সময়।
দিনগুলো এখনও কেটে যাচ্ছে সেই একই নিষ্ঠুর নিয়মে। এভাবেই যাবে জানি সবকিছু ধুয়ে-মুছে, উপড়ে নিয়ে যাবে সবকিছু। মানুষগুলো, স্মৃতিগুলো। তবে ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে ক্লান্ত দুপুরে সোনালী চিল যখন উড়ে বেড়ায় আকাশে, মাথার উপর ঘুরেঘুরে চক্কর দেয়— তখন আমার অমলেন্দুর কথা মনে পড়ে। আমার বন্ধুটি কবি হতে চেয়েছিল। বাঁচতে চেয়েছিল কবিতার ছায়াপাশে। স্বপ্ন দেখতে চেয়েছিল কবিতার ঘ্রাণ বুকে নিয়ে। কিন্তু হায়! 'জীবনের রঙ তবু ফলানো কি হয় এই সব ছুঁয়ে ছেনে!' তাই যা হবার তাই হয়েছিল, অমলেন্দু ঘুমিয়ে পড়েছিল কোন শীতল বিষন্ন রাতের কফিনে।
কবিতারা ধরা দেয়নি, কবিতারা ধরা দেয়না। কবি ডুবে মরে, কবি ভেসে যায় অলকানন্দা জলে।
হৃদয়ে নক্ষত্রের আলো জ্বালিয়ে কোন ধূসর পাণ্ডুলিপি হাতে, এক মুগ্ধ স্নিগ্ধ বিকেলে, পৃথিবীর সব ধ্বনি সব রঙ মুছে গেলে কোন এক মগ্ন মানুষীর মনে, শাড়ীর আঁচলে— হয়ত একদিন এলোমেলো পায়ে হেঁটে, মাটির সোঁদা গন্ধ গায়ে মেখে— আমি জানি, অমলেন্দু ঠিক ফিরে আসবে এই পাখি-রৌদ্র-ঘাসে।।
অরিন্দম গুস্তাভো বিশ্বাস
২৫ - ৩১ মার্চ - ১৭ এপ্রিল ২০১৪
ঢাকা
ঋণস্বীকারঃ
১. নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা
২. জীবনানন্দ দাশের কবিতা
৩. মহীনের ঘোড়াগুলির গান
৪. অমিয় চক্রবর্তীর কবিতা
৫. বিনয় মজুমদারের কবিতা
৬. শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা
৭. জয় গোস্বামীর কবিতা
৮. ছবিঃ দ্য গার্ডিয়ান
ক্যামেলিয়া'র চিঠি প্রথম বর্ষ তৃতীয় সংখ্যা, মে ২০১৪ তে প্রকাশিত