পৃষ্ঠাসমূহ

১৩ আগ, ২০১৩

আমার চোখে 'রানওয়ে'

আমি ঢাকায় যে বাড়িতে থাকি তার আগে ও পরে দুইপাশেই বস্তি আছে। পরের বস্তির ওপাশে একটা দেয়ালের পরই ঢাকা এয়ারপোর্টের রানওয়ে। আমি কাজের ফাঁকে বারান্দায় অথবা জানালার কাছে বসে সেই বস্তির মানুষদের মুগ্ধ হয়ে দেখি। যাদের নিয়ে আমরা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা প্রতিনিয়ত গলাবাজি করি সেই ‘নিম্নবিত্ত’ বিশেষণে বিশেষায়িত শ্রেনীটির জীবনযাত্রা আমি মফস্বলে বড় হয়েও এত কাছ থেকে দেখিনি কোনদিন, যা দেখতে পেয়েছি এই ইট-পাথরের ঢাকা শহরে এসে। সারাদিন বিমানের শব্দ, উঠছে-নামছে অবিরাম। ছোট বাচ্চারা বিমান দেখে দেয়ালের উপর উঠে হাততালি দেয়। বাড়ির মহিলারা কেউ ঝাঁড়ু বাঁধে, কেউবা পালে গরু। পুরুষদের কেউ রিক্সা চালায়, কারও আছে ছোটখাট ব্যবসা। মাঝে মাঝে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তুমুল ঝগড়া বাঁধে, সেটা আবার মিটমাট করে দেন সেখানকার প্রবীণেরা। একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার কারনে তাদের আর দুঃখের সীমা থাকে না, জলের মাঝেই বাস করতে হয় তখন। কিছু কিছু দিন দেখি ওপাশের বস্তির একটি ছেলে এপাশের বস্তির সামনে দাঁড়িয়ে অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে এদিক সেদিক তাকায়, কখনও বা অপ্রয়োজনে মনোযোগ দিয়ে মোবাইল টিপতে থাকে। একটু পরেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় যখন সলজ্জ ভঙ্গিতে একটি মেয়ে বের হয়ে এসে ছেলেটির সামনে দাঁড়ায়। বুঝতে পারি মন দেয়া–নেয়া চলছে তাদের। এদের জীবন দেখতে দেখতে আমাদের নিজেদের জীবনের অতি জটিল সব রসায়ন অতীব সহজ হয়ে আমার কাছে ধরা দেয়। আমি নস্টালজিক হয়ে ফিরে যাই আমার স্কুল জীবনের বাংলা বইয়ের পাতায়। জহির রায়হানের উপন্যাস ‘হাজার বছর ধরে’র নানান চরিত্রের ছাঁচে কি অবলীলায় বসে যায় আমার বাড়ির পাশের মানুষগুলো! কিন্তু এবার মনে হচ্ছে শুধু এই উপন্যাসটি নিয়ে আর ভাবতে হবে না, ভাবার জন্য আমি পেয়ে গেছি একটি নতুন মাত্রা। এবার অবশ্য আর উপন্যাস নয়, নতুন মাত্রাটি যোগ করল নির্মাতা তারেক মাসুদের সাম্প্রতিক চলচ্চিত্রঃ ‘রানওয়ে’।