পৃষ্ঠাসমূহ

২১ জুন, ২০১৫

সিনেমার পর্দায় বাবা-ছেলে

সিনেমাকে বলা হয় বাস্তবের পুনঃনির্মাণ। তাই অনেক সিনেমাই আমাদের জীবন ঘেঁষে হেঁটে যায়। তখন সেলুলয়েডের জানালা দিয়ে আমাদের নিজেদের জীবনেরই অনেক অনুভূতি আমরা পুনরায় আবিষ্কার করি। আর এই অনুভূতিগুলো কখনও ফুরিয়ে যায় না, সেই সিনেমাগুলো আবার কখনও দেখতে বসলে সেই একই অনুভূতিগুলো হৃদয়ের মাঝে ফিরে আসে।

বাবা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে যেসব সিনেমা দেখেছি সেগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেছে, মনে করিয়ে দিয়েছে নিজের জীবনেরই ছোট ছোট কোন ঘটনা অথবা স্বপ্নের কথা। এগুলোর মধ্যে কয়েকটা হয়ত খুবই নামকরা সিনেমা, কিছু হয়ত একান্তই ব্যবসায়িক সিনেমা। সেগুলোর মধ্যে থেকে সাতটি সিনেমা নিয়ে এই লেখাটি। কোন সিনেম্যাটিক বিশ্লেষণ নয়, শুধু ঘটনাগুলোকে হালকা স্পর্শ করে যাওয়ার চেষ্টা করলাম এখানে।।



ভিত্তোরিও ডি সিকার খুবই বিখ্যাত একটি নিওরিয়্যালিস্ট সিনেমা। নিওরিয়্যালিস্ট ধারার সিনেমাগুলোর মধ্যে এটাকে অন্যতম সেরা বিবেচনা করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইতালির রোমে শহরে চাকরির জন্য হাহাকার। অতিকষ্টে টিকে আছে মানুষজন। আন্তোনিয় এদেরই একজন। স্ত্রী মারিয়া আর ছেলে ব্রুনোকে নিয়ে তাঁর পরিবার। কিন্তু এই মন্দার ভেতরেও কপালে একটি চাকরি জুটে যায় তাঁর। কিন্তু সেই চাকরির শর্ত হচ্ছে থাকতে হবে নিজের একটি সাইকেল। স্ত্রীর ইচ্ছায় ঘরের ব্যবহার্য জিনিসপত্রের বিনিময়ে বন্ধক দেওয়া সাইকেলটি ছাড়িয়ে আনা হল। কিন্তু বিধি বাম, চাকরির প্রথম দিনেই চুরি হয়ে গেল আন্তোনিয়র সাইকেল। ছেলে ব্রুনোকে নিয়ে আন্তোনিয় রোমের রাস্তার রাস্তায় খুঁজে বেড়াতে লাগল তাঁর চুরি হয়ে যাওয়া সাইকেলটি।



রবার্তো বেনিগনির মাস্টারপিস সিনেমা এটি। মূল চরিত্রে অভিনয়ও করেছিলেন তিনি নিজেই। ইতালিয়ান সিনেমার নতুন ধারার সিনেমাগুলোর মধ্যে এটিকে গুরুত্বপূর্ণ একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এগিয়েছে সিনেমার গল্প। গুইডো একজন হাসি-খুশী রসিক মানুষ যে একটি রেস্টুরেন্টে ওয়েটারের কাজ করে। সে ডোরা নামের একটি মেয়ের প্রেমে পড়ে এবং পরবর্তীতে তাকে বিয়ে করে। তাদের একটি ছেলে হয় যার নাম যশূয়া। ইহুদী হওয়ার অপরাধে এদের সবাইকে জার্মানরা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়। গুইডো তাঁর ছেলেকে যে কোন মূল্যে এই যুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে দূরে রাখতে চায়। সে তাকে বুঝায় যে এটি একটি খেলা এবং এ খেলায় জিতলে একটি সত্যিকারের ট্যাঙ্ক পুরষ্কার দেওয়া হবে।



এই সিনেমাটি একটি সত্যি ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত। হোমার হিকাম এর স্মৃতিচারণমূলক বই 'দ্য রকেট বয়েস' এর উৎস।

কোলউড ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার একটি ছোট শহর। এখানে প্রত্যেকটি মানুষের ভাগ্য জড়িয়ে আছে কয়লা উত্তোলনের সাথে। কিন্তু ১৯৫৭ সালে রাশিয়ার প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ স্পুৎনিক দেখে হাইস্কুল পড়ুয়া হোমার হিকাম রকেট বানাবার স্বপ্ন দেখতে শুরু করল। একাজে মা'র সমর্থন থাকলেও শুরু হল বাবার সাথে দ্বন্দ্ব। হোমার হিকাম এবং তাঁর বাবা জন হিকাম এর মধ্যবর্তী দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের অসাধারণ চিত্রায়ণ দেখা যাবে সিনেমাটিতে। একইসাথে দারুণ মিউজিক স্কোর আবেগী করে তুলবে দর্শকদের।


সায়েন্স ফিকশন থ্রীলার ঘরানার একটি সিনেমা এটি। হোমিসাইড ডিটেকটিভ জন সুলিভান বাবাকে হারিয়েছে ছয় বছর বয়সে। তাঁর বাবা ফ্র্যাঙ্ক সুলিভান ছিলেন দমকল বাহিনীর একজন সাহসী সদস্য এবং উদ্ধারকালীন দূর্ঘটনাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। এর প্রায় ত্রিশ বছর পর জন তার বাবার হ্যাম রেডিওটি চালিয়ে অজানা কারও সাথে কথা বলতে শুরু করে এবং একসময় আবিষ্কার করে যে সে তার নিজের বাবার সাথেই কথা বলছে যে কিনা ত্রিশ বছর আগে একই হ্যাম রেডিও দিয়ে একই জায়গায় বসে তাঁর সঙ্গে কথা বলছে। এই অদ্ভুত ঘটনার কারণ না জানলেও জন তাঁর বাবাকে নানান তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে থাকে যেন ফ্যাঙ্ক সেই মারাত্মক দূর্ঘটনাটি এড়িয়ে যেতে পারে।



এটি একটি তুর্কি সিনেমা। সময়কাল সত্তর দশক। হুসেইন একজন অবস্থাপন্ন খামার মালিক। ছোট ছেলে সাদিককে সে ইস্তাম্বুলে কৃষিকাজ বিষয়ক পড়াশুনা করতে পাঠায় কিন্তু সাদিক সেখানে জড়িয়ে পড়ে বাম রাজনীতির সঙ্গে। এভাবে বাবার সাথে মনোমালিন্যে সে ঘর ছাড়ে এবং ইস্তাম্বুলে বিয়ে করে সংসার পাতে। জন্ম হয় ছেলে ডেনিজের। ছেলেকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা যায় তাঁর স্ত্রী। ডেনিজের কথা ভেবে পুলিশী নির্যাতনে মৃত্যুপথযাত্রী সাদিকের বাড়িতে ফেরা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা।

শুধুমাত্র এই সিনেমাটি নিয়ে আমার বিস্তারিত লেখা পড়তে চাইলেঃ প্রজন্মান্তরের গল্পঃ মাই ফাদার এ্যান্ড মাই সান


৬. দ্য নেমসেক (২০০৬)

ঝুম্পা লাহিড়ীর উপন্যাস 'দ্য নেমসেক' থেকে এই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন পরিচালক মীরা নায়ার।

অশোক ও অসীমা ইন্ডিয়া থেকে আমেরিকার গিয়ে ঘরবাঁধা এক দম্পতি। বহুদিন সেখানে থাকলেও ভারতীয় সংস্কৃতির আবহ তাদের ভেতর থেকে যায়। কিন্তু তাদের ছেলে গোগোলের জন্ম এবং বেড়ে ওঠা আমেরিকাতে। তাই তাঁর ধারণ করা সংস্কৃতিও পশ্চিমা ধাঁচের। এই দুই জেনারেশনের সাংস্কৃতিক সংঘাতকে কেন্দ্র করে এগিয়েছে সিনেমাটির গল্প। অশোক এবং গোগোলের সম্পর্কের সম্যক চিত্রটিও এর ভেতরে অসাধারণভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।

শুধুমাত্র এই সিনেমাটি নিয়ে আমার বিস্তারিত লেখা পড়তে চাইলেঃ দ্বান্দ্বিক সংস্কৃতির টানাপোড়েনঃ দ্য নেমসেক



সত্য ঘটনা নিয়ে নির্মিত একটি সিনেমা। ক্রিস গার্ডনারের জীবনের গল্প উঠে এসেছে এই সিনেমাটিতে।

নব্বইয়ের দশক। ক্রিস গার্ডনার একজন বোন ডেনসিটি স্ক্যানার বিক্রেতা। কিন্তু এই যন্ত্রটি যথেষ্ট জনপ্রিয় নয় এর উচ্চমূল্যের বিপরীতে সীমিত সুবিধার কারণে। স্ত্রী এবং ছেলে ক্রিস্টোফারকে নিয়ে কোনমতে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করে যায় ক্রিস। কিন্তু যন্ত্র বিক্রয়ের নিম্নগামীতায় জীবন কঠিনতর হয়ে ওঠে। একসময় স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যায়, মাথার উপরে ছাদের নিশ্চয়তাটাও আর থাকে না। ছেলেকে নিয়ে ট্রেন স্টেশনসহ বিভিন্ন জায়গায় রাত কাটাতে থাকে সে। এমন অবস্থায় স্টক ব্রোকারের চাকরি পাওয়ার একটি সম্ভাবনা দেখা দেয় কিন্তু তার জন্য ক্রিসকে ছয় মাস বিনা বেতনে চাকরি করতে হবে এবং তারপর পাশ করতে হবে একটি কঠিন পরীক্ষা।।


অরিন্দম গুস্তাভো বিশ্বাস
২১ জুন ২০১৫
ঢাকা