পৃষ্ঠাসমূহ

৭ জুন, ২০১৪

'প্রিজন ব্রেক'স

প্রায় তিন বছর আগের কথা। তখন কমিউনিটি ব্লগে সিনেমা নিয়ে লেখার চেষ্টা করতাম। সে সময় হঠাৎ একদিন মাথায় চেপে বসেছিল প্রিজন ব্রেক সিনেমা দেখার ভূত। সেই ভূত নেমে যাওয়ার আগেই দেখে ফেলেছিলাম বেশ অনেকগুলো সিনেমা। প্রত্যেকটিতে পাঁচটি সিনেমা নিয়ে মোট তিন কিস্তিতে সেগুলো নিয়ে লিখেওছিলাম ব্লগে। এখন বুঝি লেখার বিচারে সেগুলো তেমন একটা উন্নত কিছু ছিল না। সেই লেখাগুলো এতক্ষণে অরিন্দম-এ পোস্ট করব কি করব না সেটা নিয়ে নিজের ভেতরই একটা দ্বন্দ্ব ছিল। শেষমেষ ভাবলাম যে এই দারুণ সিনেমাগুলোর নামের তালিকাটা জানানোর জন্য হলেও এটা পোস্ট করা উচিত। কারণ এই পনেরোটি সিনেমার বেশ কয়েকটি 'প্রিজন ব্রেক সিনেমা'র ইতিহাসের একদম প্রথম দিকের। অল্প কিছু পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে সেই তিনটি পোস্টই একসাথে তুলে দিলাম এখানে।



বিখ্যাত ফরাসী পরিচালক রবার্ট ব্রেসোর এই সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আঁদ্রে ডেভিগনি বন্দী ছিলেন ফোর্ট মন্টলাক এ। তাঁর স্মৃতিকথার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে সিনেমাটির গল্প। এই ছবির মূল চরিত্রের নাম ফন্টেইন, অভিনয় করেছেন ফ্রঁসোয়া লেতেরিয়র। 

ফোর্ট মন্টলাকে ফন্টেইনের বন্দী জীবন, পালিয়ে যাবার নানান পরিকল্পনা এবং সেটাকে বাস্তবে রূপ দেবার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে মুভিটিতে। মুভিটির ভাষা ফ্রেঞ্চ। টানটান উত্তেজনাপূর্ণ ৯৯ মিনিটের একটি অসাধারণ সিনেমা 'এ ম্যান এসকেপড্'। এটাকে ব্রেসোর অন্যতম মাস্টারপিস হিসেবে গণ্য করা হয়।

শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন নিয়ে নতুন কিছু আসলে বলার নেই। বিশ্বজুড়ে মুভি প্রেমিকদের সম্ভবত সবচেয়ে পছন্দের সিনেমা। ইন্টারনেট মুভি ডেটাবেস(আইএমডিবি) এর টপ ২৫০টি সিনেমার মধ্যে এক মিলিয়নের থেকে বেশী ভোট পেয়ে শীর্ষস্থান দখল করা সিনেমা 'শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন'। সিনেমাটি দেখার পর 'Fear can hold you prisoner. Hope can set you free.' — এই ট্যাগলাইনটাই বারবার ঘুরতে থাকে মাথার ভেতর। মরগ্যান ফ্রিম্যান আর টিম রবিন্স এর অনবদ্য অভিনয় সিনেমাটিতে এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। পরিচালক ফ্র্যাঙ্ক ডারাবন্ট নির্মিত দূর্দান্ত একটি সিনেমা।

মুভিটির কাহিনীর মূল নায়ক অ্যান্ড্রু ডুফ্রেন্স, একজন ব্যাংকার। তাকে দোষী সাব্যাস্ত করা হয় তাঁর স্ত্রী এবং সেই স্ত্রী'র প্রেমিককে খুন করার অপরাধে। দেওয়া হয় যাব্বজীবন কারাদণ্ড। প্রেরণ করা হয় শশ্যাঙ্ক প্রিজনে। প্রায় ২০ বছর পরিকল্পনা করে তাঁর এখান থেকে পালিয়ে যাবার কাহিনীই এই মুভির প্রধান উপজীব্য।

১৯৯৪ সালে টম হ্যাংকসের 'রান ফরেস্ট রান' এর সাথে প্রায় একইসময় রিলিজ হওয়ায় সেটার তাৎক্ষণিক দারুণ জনপ্রিয়তার ভীড়ে চাপা পড়ে গিয়েছিল শশ্যাঙ্ক রিডেম্পশন। তখন বাজেটের টাকাটাও উঠে আসেনি এই সিনেমাটির, কিন্তু কালক্রমে সেই সিনেমাটিই উঠে এসেছে জনপ্রিয়তার শীর্ষে।



কলম্বিয়ায় কাজ করতে এসে কিডন্যাপড হন ইঞ্জিনিয়ার পিটার বোম্যান। তার স্ত্রী এলিস হয়ে পড়ে দিশেহারা। প্রফেশনাল নেগোশিয়েটর হিসেবে হাজির হয় টেরি থর্ন। সনাতন সংজ্ঞা দিয়ে বিচার করলে এই মুভিটিকে হয়ত প্রিজন ব্রেক নাও বলা যেতে পারে, কিন্তু আমার আছে এটিকে প্রিজন ব্রেক বলেই মনে হয়েছে।

পর্দায় রাসেল ক্রো আর মেগ রায়ানের উপস্থিতি আনন্দদায়ক। পরিচালক টেইলর হ্যাকফোর্ডের সিনেমাটি অসাধারণ কিছু নয়। তবে দেখার অন্য কিছু না থাকলে দেখে ফেলা যেতে পারে।




৪. দ্য নেক্সট থ্রী ডে'জ(২০১০)

২০০৮ সালের ফ্রেঞ্চ সিনেমা 'Pour Elle' বা 'এনিথিং ফর হার' এর হলিউডি রিমেক এই সিনেমাটি। দুইটির মধ্যে পার্থক্য তেমন একটা কিছু নেই তবে ভিনসেন্ট লিন্ডন আর ট্রয়ের হেলেন খ্যাত ডায়ানে ক্রুগার-এর অভিনয় দেখার জন্য ফ্রেঞ্চটাও দেখা যেতে পারে।

রিমেকে অভিনয় করেছেন রাসেল ক্রো এবং এলিজাবেথ ব্যাঙ্কস্। লারা ব্রেনানকে গ্রেপ্তার করা হয় তার বসকে খুন করার দায়ে। তার স্বামী জন ব্রেনান কিছুতেই এই অভিযোগ বিশ্বাস করতে পারে না। স্বাভাবিকভাবেই একজন কলেজ প্রফেসর এর পক্ষে প্রিজন ব্রেক করা যথেষ্ট কঠিন একটি কাজ হবার কথা। কিন্তু জন ব্রেনানকে এই কঠিন কাজটিই করতে হবে তাঁর স্ত্রীকে ফিরে পাবার জন্য। থ্রিল এবং ভালবাসার দারুণ এক সমন্বয় দেখা যাবে পরিচালক পল হ্যাগিসের এই সিনেমাটিতে।



এই মুভিটি একটি সত্য ঘটনা অনুসরণে নির্মিত। পরিচালনা করেছেন 'ডেড পোয়েটস সোসাইটি' খ্যাত পিটার ওয়্যার। তখন চলছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। সাইবেরিয়ান গুলাগ ক্যাম্প থেকে পালিয়ে ৪০০০ মাইল পায়ে হেঁটে হিমালয় পাড়ি দিয়ে কিছু মানুষের ইন্ডিয়ায় পৌঁছানোর কাহিনী দেখান হয়েছে মুভিটিতে। একই সাথে শত্রুপক্ষ এবং প্রকৃতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের এক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে এই সিনেমাটির ক্যামেরার কারুকাজে।

অভিনয় করেছেন জিম ষ্টুর্গেস, কলিন ফেরেল, এড হ্যারিস। বিশেষ করে জিম ষ্টুর্গেসের অভিনয় আমাকে মুগ্ধ করেছিল।


৬. দ্য গ্রেট এস্কেপ(১৯৬৩)

পল ব্রিকহিল এর লেখা 'দ্যা গ্রেট এস্কেপ' নামক বই অনুসরণে এই মুভিটি নির্মান করেন পরিচালক জন ষ্টুর্গেস। এটি কোন কাল্পনিক কাহিনী নয়, পুরোটাই সত্য ঘটনা। জার্মানীর 'ষ্ট্যালাগ লাফট ৩' বন্দীশিবির থেকে ৭৬ জন বন্দীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে মুভিটিতে। অভিনয়ে ষ্টিভ ম্যাককুইন, জেমস গার্নার, রিচার্ড অ্যাটেনবোরো।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পালিয়ে যাওয়া বন্দীদের আবার ধরে আনার কাজেই জার্মান সৈনিকদের একটা বড় অংশকে ব্যস্ত থাকতে হত। তাই জার্মানরা এমন একটা ক্যাম্প তৈরি করতে চাইল যেখান থেকে পালানো হবে অসম্ভব। এই লক্ষ্যেই তৈরী করা হয় এই 'ষ্ট্যালাগ লাফট ৩' ক্যাম্প।

বন্দীদের এখানে নিয়ে আসার প্রথম দিনেই কয়েকজন পালানোর চেষ্টা করে বিফল হয়। ক্যাপ্টেন ভার্জিল হিল্টস বেশ কয়েকবার নানানভাবে পালানোর চেষ্টা করে এবং তাকে বেশ লম্বা একটা সময় এজন্য কুলারে কাটাতে হয়। স্কোয়াড্রন লীডার বার্নেটকে ক্যাম্পে নিয়ে আসার পরে সবাই মিলে একটা সংগঠিত পরিকল্পনা করা হয়। তারা তিনটা টানেল খোঁড়ার কাজ শুরু করে যাদের নাম দেওয়া হয় টম, ডিক এবং হ্যারি। ২৫০ জনের পালিয়ে যাবার পরিকল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত নানান সমস্যায় ক্যাম্প থেকে বের হতে সক্ষম হয় ৭৬ জন। এরপর একেকজন আলাদা আলাদাভাবে পালানোর চেষ্টা করে। কেউ ট্রেনে, কেউ নৌকায়, কেউ মোটরসাইকেলে কেউবা আবার সাইকেলে।

মুভিটির অনেক কিছুই ভাল লেগেছে। বিশেষ করে রিচার্ড অ্যাটেনবোরোর দারুণ অভিনয় আর ষ্টিভ ম্যাককুইনের নিজের করা চোখধাঁধানো মোটরসাইকেল স্টান্ট এর কথা না বললেই নয়। অনেকে মনে করেন যে তারকাঁটার বেড়ার উপর দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে লাফ দেওয়াটা ষ্টিভ ম্যাককুইনের নিজের স্টান্ট করা, কিন্তু সেটা ভুল ধারণা। স্টান্টটি করেছিলেন তাঁর বন্ধু বাড একিন্স, কারণ সিনেমার প্রডিউসারেরা ম্যাককুইনকে নিয়ে এত বড় ঝুঁকি নিতে রাজী হননি। ওই একটি ছাড়া অন্য সবগুলো মোটরসাইকেল স্টান্ট অবশ্য ম্যাককুইন নিজেই করেছিলেন।

প্রিজন ব্রেক সিনেমার ইতিহাসে এটিই সম্ভবত সর্বশ্রেষ্ঠ।


৭. প্যাপিয়ন(১৯৭৩)

ফ্র্যাঙ্কলিন জে. স্কাফনার এই মুভিটি নির্মাণ করেছিলেন হেনরী চ্যারিয়ের এর লেখা বহুলবিক্রিত অটোবায়োগ্রাফিক্যাল বই 'প্যাপিয়ন' এর কাহিনী অনুসারে। এই বইয়ে বর্ণিত ঘটনাগুলি লেখকের নিজের অভিজ্ঞতা নাকি অন্য কারো এটা নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। লেখকের মতে কিছু স্মৃতিভ্রম ছাড়া এই বইয়ের পুরোটাই তাঁর নিজের জীবনের বাস্তব ঘটনা। কিন্তু কিছু গবেষকদের মতে এটি তাঁর সঙ্গের অন্যান্য বন্দীদের নানান কাহিনী এবং জেলে থাকাকালে শোনা নানান গল্প একত্র করে লেখা একটি বই।

'প্যাপিয়ন' হল একটি ফ্রেঞ্চ শব্দ। এর অর্থ হল 'প্রজাপতি'। হেনরী চ্যারিয়ের এর বুকে অংকিত প্রজাপতির উল্কি থেকেই এই নামকরণ। খুনের আসামী হিসেবে প্যাপিয়নকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে পাঠানো হয় ফ্রেঞ্চ গায়ানার ডেভিলস আইল্যান্ডে। এখানে তাঁর সাথে পরিচয় হয় আরেক আসামী লুইস ভেগার সাথে। বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এদের দুইজনের বন্ধুত্বটি মুভির একটি দিক। আরেকদিকে প্যাপিয়ন বারবার পালানোর ব্যার্থ চেষ্টা করতে থাকে এবং প্রতিবার ধরা পড়ার সাথে সাথে তার শাস্তির পরিমাণ বাড়তে থাকে, ছোট্ট একটি সেলে একাকী কাটাতে হয় লম্বা সময়। কিন্তু এতকিছুর পরেও প্যাপিয়ন হতাশ হয় না, মুক্ত জীবনের স্বপ্ন সে ছাড়ে না।

মুভির ব্যপারে প্রথম যেটা বলার সেটা হল, এই মুভিতে প্যাপিলনের ভূমিকায় ষ্টিভ ম্যাককুইনের অভিনয়শৈলীকে ঠিক কোন শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা সম্ভব সেটা আমার ঠিক জানা নেই। আমি হিপনোটাইজড হয়ে গেছি ষ্টিভ ম্যাককুইনের অভিনয় দেখে। আর বিপরীত দিকে জাষ্টিন হফম্যানও সমানে সমান। মাঝে মাঝে এমন লেগেছে যে এই দু'জনের মধ্যে ভাল অভিনয় করার একটা ঠান্ডা প্রতিযোগিতা চলছে। এই মুভিতেও ম্যাককুইন স্টান্ট করতে ছাড়েননি, মুভির শেষাংশে ক্লিফ থেকে লাফ দিয়ে পড়ার দৃশ্যটি তাঁর নিজের অভিনীত।



অ্যালকাট্রাজ হল সান ফ্রান্সিসকো বে'র একটা দ্বীপ। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার যার দূরত্ব। ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত এটা ব্যবহার করা হয়েছিল ফেডারেল প্রিজন হিসেবে। যে ঘটনা এই মুভিতে দেখান হয়েছে সেটাই অ্যালকাট্রাজ থেকে সফলভাবে পালানোর একমাত্র প্রচেষ্টা। সিনেমাটির পরিচালক ডন সিগেল।

ফ্র্যাঙ্ক মরিসকে পাঠানো হয় অ্যালকাট্রাজ প্রিজনে। এর আগে বিভিন্ন কারাগার থেকে পালিয়ে যাবার ইতিহাস আছে মরিসের। প্রিজন ওয়ার্ডেন তাকে বলে যে, এখান থেকে কেউ পালাতে পারেনা। যারা চেষ্টা করে তারা হয় গুলিতে মারা যায় অথবা সমুদ্রে ডুবে। প্রিজনে মরিসের দেখা হয় তাঁর পূর্বপরিচিত দুই ভাই জন এবং ক্লারেন্স অ্যাংলিন এর সাথে। তারা তিনজন মিলে পালানোর প্রস্তুতি নেয়। তাদের সাথে যোগ দেয় মরিসের পাশের সেলের কয়েদি চার্লি বাটস। তারা সিদ্ধান্ত নেয় সান ফ্রান্সিসকোর দিকে না গিয়ে অ্যাঞ্জেল দ্বীপের দিকে যাওয়ার।

পর্দায় ক্লিন্ট ইস্টউডের উপস্থিতি বরাবরের মতই দূর্দান্ত। আরও আছেন প্যাট্রিক ম্যাকগোহান।


৯. কন এয়ার(১৯৯৭)

যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরে এসেছে আর্মি রেঞ্জার ক্যামেরুন পো। একই সাথে আনন্দ যে সে বাবা হতে চলেছে। ক্লাবে কিছু লোক তার স্ত্রীকে উত্যক্ত করতে এলে স্ত্রীর অনুরোধে সে নিরস্ত হয়। কিন্তু সেদিন রাতেই পার্কিং এ তারা আবার ফিরে এলে পো প্রতিবাদ করে। পো'র আঘাতে মারা যায় একজন আর এজন্য তাকে যেতে হয় জেলেতে। আট বছর পর তার মুক্তির সময় আসে। এর মাঝে তাঁর মেয়েও বেশ বড় হয়ে ওঠে। পো তাঁর স্ত্রী আর মেয়েকে দেখার জন্য উদগ্রীব। আরও বেশ কিছু কয়েদীর সাথে তাকে তুলে দেওয়া হয় অ্যালবামাগামী একটি বিশেষ প্নেনে, যেটা ব্যবহার করা হয় কয়েদীদের বহন করার কাজে। সেখানে পৌঁছেই মিলবে মুক্তি, প্রথমবারের মত দেখা হবে তাঁর মেয়ের সঙ্গে। কিন্তু প্লেনটি উড়তে শুরু করার একটু পরেই কিছু কয়েদী মিলে প্লেনের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। স্ত্রী-সন্তানের সাথে পো'র দেখা হওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।

অন্য প্রিজন ব্রেক সিনেমাগুলোর সাথে পরিচালক সাইমন ওয়েষ্টের এই সিনেমাটির পার্থক্য হল এই মুভির প্রোটোগনিস্ট প্রিজন ব্রেক করার চেষ্টা করছে না। এই হিসেবে এটাকে এ্যাকশন মুভিও বলা যায়। তবে পরিবারের বিপরীতে একজন রেঞ্জারের শপথ রক্ষার যে চিত্র দেখা যায় সেটা অসাধারণ। অভিনয়ে আছেন নিকোলাস কেইজ এবং জন কুসাক।



ফ্র্যাঙ্ক পেরি যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামী। গত ১৪ বছরে তাঁর কাছে কোন চিঠি আসেনি, তাঁর সাথে কেউ দেখা করতেও আসেনি। একমাত্র স্মৃতি বলতে শুধু তাঁর মেয়ের ছেলেবেলার একটা ছবি যার বয়স এখন প্রায় ২১ বছর। একদিন হঠাৎ একটা চিঠি আসে যেখান থেকে সে জানতে পারে যে মাদক গ্রহণের ফলে তার মেয়ে এখন মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে। তখনই সে পালানোর কথা ভাবতে শুরু করে কারণ সে তাঁর মেয়ের সাথে শেষবারের মত একবার দেখা করতে চায়। তাঁর পরিকল্পনাতে যোগ দেয় আরও কয়েকজন। কিন্তু কিছু প্রভাবশালী কয়েদির মাথা গলানোতে পণ্ড হতে চলে সবকিছু।

পরিচালক রুপার্ট হুয়াইটের সিনেমাটি একটি আইরিস-ইউকে কো-প্রোডাকশন। অভিনয়ে ব্রায়ান কক্স, জোসেফ ফিয়েন্স, লিয়াম কানিংহাম, সিও জর্জ, ডমিনিক কুপার। প্রথম যেটা বলতে হয় সেটা হল প্রিজন ব্রেক মুভি হিসেবে এটার সিনেমাটোগ্রাফি ভিন্ন ধরণের। দু'টি পাশাপাশি চলমান ঘটনা দিয়ে তাদের পরিকল্পনা আর তার বাস্তবায়ন দেখান হয়েছে। ফ্র্যাঙ্ক পেরি'র চরিত্রটি ব্রায়ান কক্স এর জন্য বিশেষভাবে লেখা হয়েছিল এবং সেটার রূপায়নটাও তিনি করেছেন অসাধারন দক্ষতার সাথে।



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এরিক উইলিয়ামস ছিলেন রয়্যাল এয়ারফোর্সের পাইলট। জার্মান প্রিজন ক্যাম্প 'ষ্ট্যালাগ লাফট ৩' থেকে তাঁর পালিয়ে যাবার কাহিনী নিয়ে ১৯৪৯ সালে তিনি লেখেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস 'দ্যা উডেন হর্স'। এই বইয়ের কাহিনীর উপর নির্ভর করেই নির্মিত হয়েছে এই মুভিটি। অভিনয় করেছেন লিও জিন, এ্যান্থনি ষ্টিল, ডেভিড টমলিনসন।

'ষ্ট্যালাগ লাফট ৩' এমনভাবে তৈরী করা হয়েছিল যেন সেখান থেকে পালানো সম্ভব না হয়। ক্যাম্পের সীমানা ছিল ঘরগুলো থেকে বেশ দূরত্বে যেন পালানোর জন্য লম্বা টানেলের দরকার হয়। আবার ঐ এলাকার শুকনো আর ভিজা মাটি দেখতে ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তাই টানেল খুঁড়ে সেই মাটি অন্য জায়গায় মিশিয়ে ফেলা কঠিন ছিল। এছাড়াও টানেল খোঁড়ার ফলে যে কম্পন সৃষ্টি হয় সেটা টের পাবার জন্য জার্মানরা সিসমোগ্রাফ ব্যাবহার করত। সেজন্য টানেল খোঁড়া ছিল প্রায় অসম্ভব।

পিটার এবং জন পরিকল্পনা করে একটা কাঠের ঘোড়া বানানোর, যেটা দিয়ে সবাই শরীরচর্চা  করবে, আর তার ভেতর লুকিয়ে থাকা একজন টানেল খুঁড়তে থাকবে। এটা করার সময় তারা ঘোড়াটাকে বসাবে সীমানার কাছাকাছি কোথাও এবং সেটাই হবে তাদের টানেলের মুখ। এতে করে টানেল বেশী লম্বা করতে হবে না আর সবার লাফালাফিতে ঢাকা পড়ে যাবে তাদের টানেল খোঁড়ার কম্পন। এভাবে চলতে থাকে প্রতিদিন। টানেল খোঁড়ার শেষের দিকে এসে তাদের সাথে যোগ দেয় আরেকজন বন্দী।

জ্যাক লি পরিচালিত এই মুভিটি একটা ব্রিটিশ মুভি। আসল ঘটনার মাত্র ছয় বছর পরেই এই কাহিনী লেখেন উইলিয়ামস আর তার এক বছর পরেই তৈরী হয় মুভিটি। জার্মান ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যাবার কাহিনী নিয়ে এটাই প্রথম মুভি কিনা আমি নিশ্চিত নই কিন্তু প্রথম কয়েকটির মধ্যে যে এটি একটি এটা প্রায় নিঃসন্দেহে বলা যায়। আরেকটি বিষয় হল 'দ্যা গ্রেট এস্কেপ' মুভিতে যে ক্যাম্প দেখান হয়েছে এটা সেই একই ক্যাম্পের কাহিনী। এই ঘটনার দুই বছর পরেই সংঘটিত হয়েছিল সেই গ্রেট এস্কেপ।



জার্মান ভাষায় 'ষ্ট্যালাগ' শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে 'ক্যাম্প' বা 'বেস ক্যাম্প'। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় 'ষ্ট্যালাগ' বলতে মূলতঃ 'যুদ্ধবন্দী ক্যাম্প' বুঝান হত । এই মুভিটির কাহিনী নেয়া হয়েছে ব্রডওয়ে থিয়েটারের একটা নাটক থেকে।

প্রিজন ব্রেক হিসেবে এই মুভির কাহিনীটা কিছুটা ভিন্ন জাতের। মুভিটির চিত্রনাট্য লেখেন ডোনাল্ড এবং এডমন্ড নামের দুই জন যারা অষ্ট্রিয়ার ষ্ট্যালাগ ১৭'বি' ক্যাম্পে বন্দী ছিলেন। যে ব্যারাকের বন্দীদের নিয়ে কাহিনী, তারা সবাই আমেরিকান এয়ার ফোর্সের সদস্য।

মুভির শুরুতে দেখা যায় টানেল দিয়ে একটা পালানোর চেষ্টা চলছে। পালাচ্ছে একসাথে দুইজন – ম্যানফ্রেডি এবং জনসন। তারা বের হয়ে যাবার পরই সেফটন তাদের পালানোর সফলতার বিপক্ষে বেট রাখতে শুরু করে এবং কিছুক্ষণ পরে বাইরে গুলির শব্দ শোনা যায়। ঘটনাক্রমে দেখা যায় যে তাদের এই পালানোর পরিকল্পনার কথা আর সেই টানেলের কথা জার্মানরা আগে থেকেই জানত। তাদের নিজেদের মধ্য থেকে কেউ তথ্য পাচার করে এমন সন্দেহ হতে থাকে সবার। ক্যাম্পের ভেতরেও বিলাসবহুল জীবনের কারণে সন্দেহের শুরুতে থাকে সেফটন এর নাম। এরপর তাদের গোপন রেডিওর কথাও জার্মানরা জেনে ফেলার পর আর সেদিনই সেফটন রাশিয়ান ফিমেল ক্যাম্পে পার্টি করে আসলে তাদের সন্দেহ পূর্ণতা পায়। উত্তম-মধ্যম খাওয়ার পর সেফটন প্রতিজ্ঞা করে এই তথ্য পাচারকারীকে খুঁজে বের করার।

এই মুভির ব্যপারে বলতে গেলে প্রথমে আসবে উইলিয়াম হোল্ডেন এর অসাধারণ অভিনয়ের কথা। এই মুভিতে অভিনয়ের জন্য তিনি অস্কার পুরষ্কার জিতে নেন। আর এই সিনেমাটির মধ্যে অনেক মজার জিনিস আছে, একবার দেখতে বসে গেলে না দেখে উঠে যাওয়া মুশকিল। পুরোটা সময় সমান আকর্ষণ ধরে রাখতে পারে মুভিটি। এটির পরিচালক বিলি ওয়াইল্ডার।



ডন পিয়ার্সের ১৯৬৫ সালের নভেল 'কুল হ্যান্ড লুক' হচ্ছে এই মুভিটির কাহিনীর মূল ভিত্তি। পার্কিং মিটারের পাইপ কাটার অপরাধে গ্রেফতার করা হয় লুকাস জ্যাকসনকে। দেওয়া হয় ফ্লোরিডা প্রিজন ক্যাম্পে দুই বছরের কারাদণ্ড। ক্যাম্পের অঘোষিত হিরো ড্রাগলাইনের সাথে কথা-কাটাকাটির ফলে তাদের মধ্যে একটা বক্সিং ম্যাচ হয়। যেটাতে লুক জিততে না পারলেও ড্রাগলাইন তাকে নক-আউট করতে পারে না। এরপরে পোকার খেলার সময় লুক কোন ভাল কার্ড ছাড়াই সেটা জিতে নেয়। এভাবে লুক সবার মধ্যে নিজেকে আলাদা প্রমাণ করে। তাই তাঁর নামই হয়ে যায় 'কুল হ্যান্ড লুক'। এভাবেই সময় কেটে যাচ্ছিল কিন্তু মা'র মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর লুক পালানোর চেষ্টা করতে থাকে, আর প্রতি চেষ্টার সাথে বাড়তে থাকে শাস্তির প্রকোপ।

ষ্টুয়ার্ট রোসেনবার্গ পরিচালিত এই মুভিটির ব্যপারে যেটা বলার সেটা হল, পুরো মুভিটাই ফিল করার একটা বিষয়, ভাষায় প্রকাশ করাটা কঠিন। মুভিতে পল নিউম্যান এর অভিনয় অসাধারণ, পুরষ্কার হিসেবে অস্কারও জিতে নিয়েছিলেন সেবার। আর মিউজিকগুলোও ঠিক একইরকম সন্মোহনী।



অ্যালেন পার্কার পরিচালিত এই মুভিটি একটি সত্য ঘটনা নিয়ে তৈরী। বিলি হায়েস এর ১৯৭৭ সালে লেখা বই 'মিডনাইট এক্সপ্রেস' অনুসারে এটি নির্মিত। চিত্রনাট্য লিখেছেন বিখ্যাত পরিচালক অলিভার ষ্টোন এবং তিনি এজন্য অস্কারও জেতেন। অভিনয় করেছেন ব্র্যাড ডেভিস, পাওলো বোনাকেল্লি।

ইস্তাম্বুল এয়ারপোর্টে দুই কেজি 'হাশিস' সহ ধরা পড়ে আমেরিকান ছাত্র বিলি হায়েস। এজন্য তাকে জেলে পাঠানো হয় দুই বছরের জন্য। জেলের ভেতর বিভিন্ন অত্যাচার সহ্য করে সে দিন গুনতে থাকে মুক্তির প্রতীক্ষায়। কিন্তু মুক্তির আর মাস দুয়েক বাকী থাকতে তাকে আবার বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, এবার তাঁর শাস্তির সময়কাল বদলিয়ে ৩০ বছর করা হয়। সে প্রথমে অনেকের সাথে পরিকল্পনা করে পালানোর চেষ্টা করতে থাকে। তারপর নানানভাবে ব্যর্থ হয়ে শেষে কিছুটা পাগলের মত হয়ে যায়। অবশেষে পাঁচ বছর কারাভোগ করার পর সে পালাতে সমর্থ হয়।

এই মুভিটি ভয়ানকভাবে বিতর্কিত একটি মুভি। অনেকের মতে এই মুভিতে তুর্কীদের খারাপভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিলি হায়েসেরও একই মত। তিনি আবার ২০০৪ সালে তুরস্ক গিয়ে এজন্য দুঃখ প্রকাশও করেছেন। এই মুভি রিলিজ হওয়ার পর তুরস্কতে ট্যুরিষ্টের সংখ্যা ভয়ানকভাবে কমে গিয়েছিল সেইসময়।



এই মুভিটি তৈরী হয়েছে আলেকজান্দার দ্যুমা'র ১৮৪৪ সালের বিখ্যাত নভেল 'দ্যা কাউন্ট অফ মন্টে ক্রিস্টো' অনুসরণে। অভিনয়ে জেমস্ কেভিজেল, গাই পিয়ার্স, রিচার্ড হ্যারিস।

এডমন্ড দান্টেস্ আর ফারনার্ড মন্ডেগো দুই নাবিক ছিল ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কিন্তু এডমন্ডের প্রেমিকার প্রতি তাঁর গোপন প্রেমের ব্যর্থতা এবং জাহাজের ক্যাপ্টেন হয়ে যাওয়া এডমন্ডের সাফল্যে ফারনার্ডের ঈর্ষান্বিত হওয়ার মধ্য দিয়েই চলতে শুরু করে এই মুভিটি। ছোট্ট একটি সুযোগ পেয়েই বিভিন্ন কলা-কৌশলে এবং এক উচ্চাভিলাষী বিচারক ভিলেফোর্টের সাহায্যে দেশদ্রোহীতার অভিযোগ এনে এডমন্ডকে একটি দূর দ্বীপের জেলখানায় পাঠিয়ে দিতে সমর্থ হয় সে। সাথে সাহায্য পায় সেই জাহাজের ফার্স্ট মেট ড্যাংলার্সের। পরে সে এডমন্ডের প্রেমিকা মার্সেডেসকে বলে যে তাঁর প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।

এই গল্পকে মুভির রূপ দেওয়া এটাই প্রথম নয়। প্রথম মুভিটি তৈরী হয় ১৯০৮ সালে যেটা ছিল নির্বাক চলচ্চিত্র। এরপর একই নামে এই ফিল্মটি তৈরী হয় মোট দশবার। কেভিন রেনল্ডস পরিচালিত ২০০২ সালেরটি হল এর দশমতম সংস্করণ।।


অরিন্দম গুস্তাভো বিশ্বাস
১৭ ও ২৪ নভেম্বর এবং ০৩ ডিসেম্বর ২০১১
ঢাকা