ঠোঁটে পাতার বিড়ি আর হাতে
বাংলা মদের বোতল। মাথাভর্তি উদভ্রান্তের মত এলোমেলো চুল, ক্ষুরের স্পর্শাভাবে গালে
খোঁচা খোঁচা দাড়ি। পরনে ধুলিমলিন পাজামা-পাঞ্জাবীর সাথে কাঁধে একটা শান্তিনিকেতনী ঝোলা।
চোখে কালো ফ্রেমের চশমা, সে চোখে কৌতুক মেশানো ধারালো দৃষ্টি। 'তিনি কে' এই প্রশ্ন
কেউ করলে কোনরকম হেঁয়ালী না করেই সরাসরি জবাব দিয়ে দেবেন - 'আমি এক মাতাল। ভাঙ্গা বুদ্ধিজীবী,
ব্রোকেন ইন্টেলেকচুয়াল'। এই হল কিংবদন্তী চলচ্চিত্রকার ঋত্বিক ঘটকের লেন্সের ভেতর দিয়ে
নিজেকে দেখার উপলব্ধি।
পুরো নাম ঋত্বিক কুমার ঘটক।
জন্মেছিলেন ঢাকায়, ১৯২৫ সালের ৪ নভেম্বর। বাবার নাম সুরেশ চন্দ্র ঘটক, মা ইন্দুবালা
দেবী। পরিবারের মধ্যে আগে থেকেই শিল্প-সাহিত্যের চর্চা ছিল। বাবা সুরেশ চন্দ্র ঘটক
একজন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হলেও কবিতা ও নাটক লিখতেন। খ্যাতিমান লেখক মণীশ ঘটক(ছদ্মনাম
'যুবনাশ্ব') ছিলেন ঋত্বিকের বড় ভাই। ঋত্বিক ঘটক ১৯৪৬ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে আই.এ এবং
১৯৪৮ সালে বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজ থেকে বি.এ. ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৫০ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে
ইংরেজিতে এম.এ. কোর্স শেষ করলেও পরীক্ষাটা আর দেওয়া হয়ে ওঠেনি তাঁর। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ,
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং সর্বোপরি ১৯৪৭ এর ভারত ভাগের ফলে ঘটক পরিবার কলকাতায় চলে যেতে
বাধ্য হয়। নিজের জন্মভূমি ত্যাগ করে শরনার্থী হবার মর্মবেদনা ঋত্বিক কোনদিন ভুলতে পারেননি
এবং তাঁর জীবন-দর্শন নির্মাণে এই ঘটনা ছিল সবচেয়ে বড় প্রভাবক যা পরবর্তীকালে তার সৃষ্টির
মধ্যে বারংবার ফুটে ওঠে।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
তাজউদ্দীন আহমদ। জন্মেছিলেন ঢাকার অদূরে
কাপাসিয়ার দরদরিয়া গ্রামে, ১৯২৫ সালের ২৩শে
জু্লাই। নানান ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে
যে মানুষটি
পরবর্তীকালে হয়ে উঠেছিলেন বাংলাদেশের যুদ্ধদিনের
কান্ডারী, এক নিঃসঙ্গ সারথী।
ছোট্টবেলাতেই এই মানুষটি
দেশপ্রেম আর
রাজনীতির দর্শন
পেয়েছিলেন ব্রিটিশ রাজবন্দীদের কাছ থেকে। মানবতাবাদী
এই মানুষটি
স্কুলের ছুটিতে
বাড়িতে ফিরেও
লেগে যেতেন
কলেরা রোগীদের
সেবা শুশ্রষা
করার কাজে। উন্নত
জীবনযাপনের স্বপ্নপূরণের জন্য লেখাপড়া করার
ইচ্ছা তাঁর
মধ্যে ছিলনা,
তাঁর স্বপ্ন
ছিল রাজনীতি
করার, যে
রাজনীতি হবে
মানুষের জন্য। তবু
অসাধারণ মেধার
সাহায্যে তিনি
কৃতিত্বের সাথে পেরিয়ে গিয়েছিলেন শিক্ষাজীবনের
প্রতিটি ধাপ। রাজনীতিতে
সক্রিয় হবার
কারণে শিক্ষাজীবনের
ধারাবাহিকতায় ছেদও পড়েছিল বারবার।
ধীরে ধীরে
এই প্রচারবিমুখ
মানুষটি নিজগুনে
হয়ে উঠেছিলেন
তৎকালীন আওয়ামী
লীগের এক
অপরিহার্য কর্মী, শেখ মুজিবুর রহমানের
একান্ত সহচর।