পৃষ্ঠাসমূহ

২৭ ডিসে, ২০১৪

অমলেন্দু কবি হতে চেয়েছিল

সেদিন প্রবল বর্ষণে চারিদিক অন্ধকার। আষাঢ় যেন পূর্ণোদ্যমে নেমে এসেছিল আকাশ ফুঁড়ে। হঠাৎ বৃষ্টির গন্ধে মাতাল পরিবেশ। বাইরে মানুষপাখিরা দিশেহারা। ওপাশের নারিকেল গাছগুলো যেন তীব্র বাতাসে মাটি ছুঁতে চাইছিল। শক্তিশালী বিজলি চমকে সারা আকাশ ভয়ানক সাদা আলোয় আলোকিত হয়ে যাবার পরমুহূর্তেই গুড়গুড় শব্দে কোন দানব যেন প্রকৃতিকে ভেঙে ফেলছিল প্রচণ্ড আক্রোশে। বাড়িতে সেদিন ছিল না কেউ। পরিবার গেছে সপ্তাহখানেকের জন্য অন্য একটি শহরে বিয়েতে যোগ দিতে। অফিসের ব্যস্ততায় থেকে গেছি আমি। কাজের মানুষগুলো সব যে যার মত আরাম করে ঝিমুচ্ছে এই বৃষ্টিস্নাত দুপুরে। এই দূর্যোগের মধ্যে কলিংবেলের আওয়াজে প্রথমে কিছুটা বিরক্তই হয়েছিলাম। দরজা খুলতেই পিয়ন বাড়িয়ে দিল একটি পার্সেল, তার সাথে সাঁটা একটি সস্তা খাম। ধন্যবাদ দিয়ে সেগুলো নিয়ে এলাম। পার্সেলটা রেখে খামটাই হাতে তুলে নিলাম প্রথমে। অতঃপর সেই খাম থেকেই বেরুল সংক্ষিপ্ত চিঠিটি। সংক্ষিপ্ত হলেও মূল সংবাদ তাতে পরিষ্কার।


১৮ নভে, ২০১৪

ক্লান্তদিনের শেষে

মেঘঝরা প্রতিটি বৃষ্টির ফোঁটায় মাটি ছোঁয় বিষন্নতা
দূর্যোগের রাতে আশ্রয় খোঁজে নিরুপায় ঘাসফড়িং
ক্ষীন আরও ক্ষীন হয়ে আসে দোয়েলের কণ্ঠস্বর
নিরাপদ বাঁশবাগানে জড়ো হয় চাঁদের ছায়ারা।


১৩ অক্টো, ২০১৪

স্পর্শ সময়

প্রথমে আমি দিন গুনতাম, তারপর সপ্তাহ!
একসময় অবাক হয়ে দেখলাম,
সাতদিনের সপ্তাহের বাঁধনে আর ধরা যাচ্ছেনা সময়টাকে!
অনন্যোপায় হয়ে মাসের সাহায্য নিলাম তারপর।
একদিন মাসের হিসেবও ফুরিয়ে এল,
আমি গুনতে শুরু করলাম বছর।


৭ সেপ, ২০১৪

দেজ্যা ভ্যু

ভেসে বেড়ানো অনুভূতিগুলো আমার খুব চেনা,
যেন কতকালের পরিচিত দেজ্যা ভ্যু।

আবছায়া রাস্তায় একটা নির্মানাধীন হাইরাইজের পাশে,
ডাগর চোখের বৃষ্টি আটকিয়ে মেয়েটি দাঁড়িয়ে থাকে,
তপ্ত দুপুরে পদ্মার চিকচিক করা পানি যেন,
হঠাৎ তার দু'চোখে এসে স্থির হয়।


৩ আগ, ২০১৪

সত্যজিৎ এর 'শতরঞ্জ কি খিলাড়ি'

ফেলুদা সিরিজের 'বাদশাহী আংটি' পড়েছেন আর মনে মনে 'ভুল ভুলাইয়া' জিনিসটা নিজের চোখে দেখার ইচ্ছা হয়নি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। আমিও এর ব্যতিক্রম কিছু ছিলাম না। কিন্তু সাধের সাথে সাধ্য আর সুযোগের মিল ছিল অপ্রতুল। ঘটনাচক্রে সেই লখনৌতে যাবার সুযোগ এসে গেল ২০০৯ সালের মাঝের দিকে।

লখনৌকে বলা হয় 'নবাবদের শহর'। সেখানে পৌঁছেই খেয়াল করলাম যে এই শহর ঠিক আর দশটা শহরের মত নয়। এখানে সব কিছুতেই কেমন যেন একটা 'বাদশাহী' ভাব বিদ্যমান। লোকজন সবাই কথা বলছে উর্দূতে, কাউকে হিন্দীতে কিছু জিজ্ঞাসা করলে একবারে বুঝতে পারে না, দু-তিনবার বলে বুঝাতে হয়। খাওয়া-দাওয়া করা মানেই একটা এলাহী কারবার। বলা হয়ে থাকে যে তৎকালীন আওয়াধ রাজ্য(যার রাজধানী ছিল লখনৌ) থেকেই কাবাবের মত ঢিমে আগুনে রান্না করা খাবারের সূত্রপাত। রাতে খেতে গিয়ে খেলাম আট রকমের মাংসের আইটেম, অনেকগুলোর নামও আমি শুনিনি আগে। শোনা যায়, আওয়াধের শেষ নবাব ওয়াজিদ আলী শাহ্‌'র খাবার ছয়টা আলাদা আলাদা রন্ধনশালা থেকে আনা হত।


১৩ জুল, ২০১৪

তথাকথিত আনন্দনগরী

আলো ঝলমলে উৎসব,
চাকচিক্যময় ত্রিমাত্রিক আলোছায়া,
সুউচ্চ ভবন, অনুচ্চ সন্মান।
ভেসে আসে তাদের উদ্দাম উল্লাস,
বেমানান ফকিরটি কান পেতে শোনে।

পারফিউম আর হাইহিলের আঘাতে,
রক্ত ঝরে পথের ফকিরের ক্ষতে,
গাড়িটি এসে দরজা খুলে দাঁড়ায়।
পলিশড্‌ শু হেঁটে আসে বুকের উপর পা রেখে,
দম বন্ধ হয়ে আসে বৃদ্ধ ফকিরটির।


৭ জুন, ২০১৪

'প্রিজন ব্রেক'স

প্রায় তিন বছর আগের কথা। তখন কমিউনিটি ব্লগে সিনেমা নিয়ে লেখার চেষ্টা করতাম। সে সময় হঠাৎ একদিন মাথায় চেপে বসেছিল প্রিজন ব্রেক সিনেমা দেখার ভূত। সেই ভূত নেমে যাওয়ার আগেই দেখে ফেলেছিলাম বেশ অনেকগুলো সিনেমা। প্রত্যেকটিতে পাঁচটি সিনেমা নিয়ে মোট তিন কিস্তিতে সেগুলো নিয়ে লিখেওছিলাম ব্লগে। এখন বুঝি লেখার বিচারে সেগুলো তেমন একটা উন্নত কিছু ছিল না। সেই লেখাগুলো এতক্ষণে অরিন্দম-এ পোস্ট করব কি করব না সেটা নিয়ে নিজের ভেতরই একটা দ্বন্দ্ব ছিল। শেষমেষ ভাবলাম যে এই দারুণ সিনেমাগুলোর নামের তালিকাটা জানানোর জন্য হলেও এটা পোস্ট করা উচিত। কারণ এই পনেরোটি সিনেমার বেশ কয়েকটি 'প্রিজন ব্রেক সিনেমা'র ইতিহাসের একদম প্রথম দিকের। অল্প কিছু পরিবর্তন-পরিবর্ধন করে সেই তিনটি পোস্টই একসাথে তুলে দিলাম এখানে।


১৭ মে, ২০১৪

চিরন্তন চিরনূতন জিজ্ঞাস্য

কেরামত মিয়াকে পেশায় একজন ব্যবসায়ী বলা যায়। ঢাকা এয়ারপোর্টের সামান্য পরেই তার একটি চায়ের দোকান আছে। উনার স্ত্রীর নাম সালমা বেগম, তিনি একজন গার্মেন্টস কর্মী। তার দুই মেয়ে, এক ছেলে। বড় মেয়েটিকে বিয়ে দিয়েছেন। মেঝ মেয়েটি তার সাথেই থাকে, মায়ের মত গার্মেন্টসে কাজ করে। আর ছোট ছেলেটি পাঁচ বছরের, তার নাম সোহেল। নিকুঞ্জ ২০ নম্বর রোডের শেষে একটি ছাঁপড়া ঘরে তাদের বাসা। বাসা বলতে একটি বড় বস্তির মধ্যে ছোট্ট একটি ঘর।


৩ এপ্রি, ২০১৪

আবহমান

মোমের আলোয় আজ গ্রন্থের কাছে ব'সে―অথবা ভোরের বেলা নদীর ভিতরে
আমরা যতটা দূর চ'লে যাই―চেয়ে দেখি আরো-কিছু আছে তারপরে।

― জীবনানন্দ দাশ


১৭ মার্চ, ২০১৪

পুরাতন বনলতা সেন

হোক সে লাল-কাল জামা পরা মেয়েটি,
অথবা হোক না নাটোরের বনলতা সেন!
আশায় থাকি ডাক দিয়ে বলবে সে
এ্যাঁই যে স্যার, এতদিন কোথায় ছিলেন?

গভীর রাতে মোবাইলের অপর প্রান্তে,
অথবা কোন দারুচিনি দ্বীপের ভিতর
হয়ত তার চোখে জ্বলে কপট আগুন,
আরও থাকে অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার



১৩ মার্চ, ২০১৪

প্রিয় মৃত্তিকা

দেশের প্রতি ভালবাসাকে এক কথায় আমরা বলি 'দেশপ্রেম।' সংজ্ঞা ও প্রকাশে বিভিন্নতা থাকলেও এ শব্দের রয়েছে অনন্য এক বৈশিষ্ট্য। দেশপ্রেম নিয়ে কথা উঠলে কেউ কোনদিন প্রশ্ন করবেনা যে ঠিক কোন দেশের প্রতি প্রেমের কথা বলা হচ্ছে, কারণ দেশপ্রেমের 'দেশ' এক জন্মভূমি ছাড়া অন্য কোন দেশ হতেই পারে না। আমরা যেখানেই যাই না কেন, দিনশেষে জন্মভূমিই আমাদের আশ্রয়, সেখানেই প্রোথিত আমাদের পরিচয়।


২৩ ফেব, ২০১৪

প্রিয় অতন্দ্রিলা

অতন্দ্রিলা,
তুমি জানলেনা কোনদিন,
তোমার মুখে ঐ কথাটি শোনার
সেই কাঙ্খিত মুহূর্তটির জন্য
আমি অপেক্ষা করেছি কতকাল,
কত হাজার রাত নির্ঘুম থেকেছি,
শুধু সেই অনুভূতি—
তোমার মুখের হাসি,
অনুভবের প্রস্তুতি নিতে—
শিমুল তুলোর মত উড়ে
আলতো করে তোমার গাল ছুঁয়ে
কানে গোঁজা গোলাপের পাঁপড়ি হয়ে
আমি কোন অতীতে হারিয়ে গেছি তোমাতে—
অতন্দ্রিলা,
জানোনি তুমি, জানবে—
হঠাৎ আমিহীন কোন এক নক্ষত্র-ছাওয়া রাতে।।


২২ ফেব, ২০১৪

পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ লবণপানি

'নৌকা ছাড়ল আন্ধারিয়া গ্রাম থেকে। বিয়ে করে শ্যামাকে নিয়ে সুকুমার রওয়ানা দিয়েছে দুপুরের দিকে। শ্যামা দেখতে পেল আন্ধারিয়ার মাটি, গাছ, ঘরবাড়ি একটু একটু করে দূরে সরে যাচ্ছে। যেমন করে আন্ধারিয়ার বাঁশঝাড়ের ওই পারে অন্ধকার নামলে একটু একটু করে অদৃশ্য হয়ে যায় নদীর ওইপারের গ্রাম, আর কখনো কারো হাতে লণ্ঠন জ্বলে উঠলে নদীর পানিতে ভাসতে থাকা আলো জানান দেয় অদৃশ্য হলেই সব নাই হয়ে যায় না।'— পড়লাম এবারের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত মোশাহিদা সুলতানা ঋতু'র প্রথম উপন্যাস 'লবণপানি'।


১৭ ফেব, ২০১৪

জীবনানন্দের 'মনিয়া'

জীবনানন্দ দাশের কবিতায় 'মনিয়া' নামটি খেয়াল করেছিলাম আগেই, তবে এটা কোন ব্যক্তির নাম নাকি মনিয়া/মুনিয়া পাখির কথা বলা হচ্ছে সেটার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না। সেদিন পত্রিকা মারফত জানতে পারলাম মনিয়া ছিলেন জীবনানন্দের প্রথম প্রেমিকা। তাদের দেখা হয়েছিল বরিশালের একটি গির্জায়। যদিও সেই সূত্র এই তথ্যটিকে 'কথিত আছে' বলে প্রকাশ করছে, তবু সত্য-মিথ্যা যাই হোক এই ব্যাপারটা কিছুটা উল্টে-পাল্টে দেখা যেতে পারে।


আপাতত দুইটি কবিতার কথা মনে পড়ছে যেখানে 'মনিয়া' নামটির উল্লেখ আছে। একটিতে পাওয়া যাচ্ছে কোন এক রূপসীর কথা, আরেকটিতে দেখা যাচ্ছে ফেলে আসা এক প্রেয়সীকে ফিরে পাবার আকুতি।



১৪ ফেব, ২০১৪

ভালোবাসার সূর্যরেখা

প্রিয় মুখ নিয়ে যখন ভাবতে বসলাম, তখন একটা সিনেমার সিকুয়েন্সের মতো কিছু ঘটনা আমার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল। যেন একটা বায়োগ্রাফিক্যাল মুভি, যার পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে জীবনযুদ্ধ আর হারতে না শেখার শিক্ষা। তাই সেই মুভিটিরই একটা ছোট্ট স্ক্রিপ্টের মতো লেখার চেষ্টা করলাম।

পঞ্চাশ দশকের শেষের দিক। নড়াইলের নলদী জমিদার বাড়ি। একটা বড় খাটের একপাশে বালিশে হেলান দেয়া একজন যুবতী। পাশের টেবিলটায় বেশ কিছু ওষুধের শিশি। খাটের অন্যপাশে ঘুমাচ্ছে তার দুটি ছেলে। একজন কিছুটা বড়, বয়স দুই-তিন বছর হবে, অন্যজন আরও ছোট, দুধের শিশু। সে ঘাড় ঘুরিয়ে তার ছেলেদের দিকে তাকায়, তার চোখেমুখে ফুটে ওঠে দুশ্চিন্তার ছাপ। সে টের পায় তার সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। পাশে রাখা কাগজ-কলম টেনে নেয় সে। খুলনায় তার শাশুড়িই এখন তার শেষ ভরসা। কাঁপা হাতে সে লিখতে থাকে – ‘মা, আমি না থাকলে আপনার আদরের নাতিদের ওরা বিলিয়ে দেবে। আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন এসে আপনার নাতিদের নিয়ে যান...।’


২৫ জানু, ২০১৪

মধুকবি ও এতক্ষণে অরিন্দম

আজ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মদিন। আমার ব্লগের নামটির জন্য আমি মধুকবির প্রতি কৃতজ্ঞ। তাঁর রচিত মেঘনাদবধ কাব্যের(১৮৬১) একটি পংক্তি থেকেই আমার নগণ্য ব্লগটির নামকরণ করেছিলাম এতক্ষণে অরিন্দম। বিষয়টি অনেকেই জ্ঞাত আছেন, আবার অনেকে বিভিন্ন সময় আমার কাছে জানতেও চেয়েছেন― সেই কারণে আজ এই বিশেষ দিনে ব্লগের নামটি নিয়ে কিছু কথা বলার ইচ্ছে হল।


৭ জানু, ২০১৪

সেলুলয়েডের মদন তাঁতী

ঋত্বিক কুমার ঘটক। কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক। ক্ষণজন্মা এই মানুষটি সারাজীবন বিপুল বাধার সাথে লড়াই করে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা বানানোর সুযোগ পেয়েছিলেন মাত্র আটটি। অবশেষে বিদায় নিয়েছিলেন একবুক অভিমান নিয়ে। সংশপ্তকের মত সেই বিদায় ছিল স্বীকৃতিবিহীন, সাথে সাথে কপর্দকশুন্য অবস্থায়ও বটে। একজন শিল্পী হিসেবে শিল্পের প্রতি বিশ্বস্ততা নাকি পরিবারের জন্য অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা― ঋত্বিকের মধ্যে এই সিদ্ধান্তের টানাপোড়েন চলেছিল শেষ পর্যন্ত। যে আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন, তাঁর জীবনকালে সেটা আর বাস্তব হয়ে ওঠে না। তবু নিজের মধ্যে কি এক অদ্ভুত বিশ্বাস ছিল যে একদিন প্রাপ্য স্বীকৃতি পাবে তাঁর শিল্পকর্ম, এমনকি তাঁর মৃত্যুর পরে হলেও।