চার্লি চ্যাপলিনের নাম শুনলেই কেউ কেউ ফিক করে হেসে পড়ে, কেউ গম্ভীর হয়ে যায়। হাসির মধ্যে দিয়ে বাস্তব জীবনের কি অসাধারণ চিত্রায়ন করে গেছেন ভদ্রলোক। কেউ হাসিটা দেখে, কেউ বাস্তবটা। সব বড় মাপের মানুষের মধ্যে আমি দর্শন খুঁজি। আমার ধারণা একটা মানুষ তখনই বড় কিছু হয় যখন তাঁর একটি পরিষ্কার দর্শন থাকে। সেটার প্রকাশমাধ্যম হতে পারে সাহিত্য, হতে পারে সেলুলয়েড, হতে পারে অন্য যে কোন কিছু। যে মানুষটা বলতে পারে Nothing is permanent in this wicked world, not even our troubles, তাঁর দর্শন সম্পর্কে কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। আজ(১৬ই এপ্রিল ২০১৩) চ্যাপলিনের জন্মদিন। তাই চ্যাপলিনকে নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা হল। সেই চিন্তা থেকেই চ্যাপলিনের ১৯৪০ সালের চলচ্চিত্র দ্যা গ্রেট ডিক্টেটর এর শেষাংশের ভাষণটিকে অনুবাদ করে ফেললাম। অনুবাদক হিসেবে আমি যথেষ্ট ভাল না হওয়ায় সাথে ইংরেজীটাও দিয়ে দিলাম। অতি আগ্রহীদের জন্য দিলাম ভিডিওটি। শুভ জন্মদিন চার্লস!
আমি দুঃখিত, কারণ আমি কোন সম্রাট
হতে চাইনা। সেটা আমার ইচ্ছাও নয়। আমি কাউকে জয় বা শাসন কোনটাই করতে চাইনা। যদি সম্ভব
হয় আমি সবাইকে সাহায্য করতে চাই। ইহুদি, বিধর্মী, কালো মানুষ, সাদা মানুষ সবাইকে। আমরা
সবাই একে অপরকে সাহায্য করতে চাই। এটাই মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি। আমরা একে অন্যের
সুখ দেখেই বেঁচে থাকতে চাই, দুরবস্থা দেখে নয়। আমরা একে অপরকে ঘৃণা আর অবজ্ঞা করতে
চাই না। এই পৃথিবীতে সবাই জন্যই স্থান রয়েছে, এবং এই পৃথিবী প্রত্যেকের জন্যই স্থান
সংকুলান করে দিতে পারে। জীবনের পথ হতে পারে মুক্ত এবং সুন্দর, কিন্তু আমরা আমাদের পথ
হারিয়ে ফেলেছি। লোভ মানুষের আত্মাকে কলুষিত করেছে, পৃথিবীকে ঘিরে ফেলেছে ঘৃণার বেষ্টনীতে,
আমাদের নিয়ে গেছে দুর্দশা আর রক্তপাতের দিকে। আমরা গতি লাভ করেছি, কিন্তু নিজেদের বদ্ধ
করে ফেলেছি। যন্ত্রলব্ধ প্রাচুর্যতা আমাদের আরও অভাবি করে রেখেছে। আমাদের জ্ঞান আমাদের
নৈরাশ্যবাদী করেছে; চাতুরতা করেছে কঠোর এবং নির্দয়। আমরা অনেক চিন্তা করি এবং সামান্য
অনুভব করি। যন্ত্রের চাইতে, আমাদের মানবতা বেশী প্রয়োজন। চাতুরতার চাইতে, বেশী প্রয়োজন
দয়াশীলতা এবং নম্রতা। এইসব গুণ ছাড়া, জীবন হয়ে উঠবে সহিংস এবং হারিয়ে যাবে সবকিছুই।
উড়োজাহাজ এবং রেডিও আমাদের কাছাকাছি এনেছে। এই আবিষ্কারগুলোর প্রকৃতিই মানুষের ভালোত্বের
জন্য কেঁদে ফেরে; কেঁদে ফেরে সার্বজনীন ভ্রাতৃত্বের জন্য; আমাদের সকলের একতার জন্য।
এমনকি এখনও আমার কন্ঠস্বর পৌঁছে যাচ্ছে সারা বিশ্বে, লক্ষ লক্ষ নিরাশ হয়ে যাওয়া পুরুষ,
নারী এবং ছোট্ট শিশুদের কাছে, যারা এমনই একটি পদ্ধতির বলি হয়েছে যেখানে নিরাপরাধ মানুষকে
নির্যাতন ও বন্দীত্ব বরণ করতে হয়। যারা আমার কথা শুনতে পারছে, তাদের প্রতি আমি বলতে
চাই, হতাশ হয়ো না। আমাদের এই দূর্দশা হল একটি ক্ষণস্থায়ী লোভ-লালসার বয়ে যাওয়ার মত,
সেইসব মানুষের বেদনার বয়ে যাওয়ার মত যারা মানুষের অগ্রগতি দেখে ভীত হয়। মানুষের ঘৃণা
একদিন শেষ হয়ে যাবে, একনায়করাও মারা যাবে, এবং জনতার ক্ষমতা জনতার হাতেই ফিরে আসবে।
যতদিন মানুষ মারা যাবে, স্বাধীনতা কখনও বিনষ্ট হবে না। সৈনিকেরা! বর্বরদের কাছে নিজেদের
বিকিয়ে দিও না, যারা তোমাদের ঘৃণা করে, দাস করে রাখে; যারা তোমাদের জীবনকে আবদ্ধ করে
রাখে, বলে দেয় কি করতে হবে, কি চিন্তা করতে হবে আর কি অনুভব করতে হবে! যারা তোমাদের
অনুশীলন করায়, খাবার খাওয়ায়, গবাদী পশুর মত যারা তোমাদের বড় করে তোলে, অপচয়যোগ্য হিসেবে
তোমাদের ব্যবহার করে। এইসব অস্বাভাবিক মানুষদের হাতে তোমরা নিজেদের তুলে দিও না - এইসব
যান্ত্রিক হৃদয়ের যান্ত্রিক মনের যান্ত্রিক মানুষদের হাতে! তোমরা যন্ত্র নও, তোমরা
গবাদী পশুও নও, তোমরা মানুষ! তোমাদের হৃদয়ে মানবতার জন্য ভালবাসা রয়েছে! তোমরা ঘৃণা
করবে না! শুধুমাত্র প্রেমহীনেরাই ঘৃণা করে; প্রেমহীনেরা এবং অস্বাভাবিকেরা। সৈনিকেরা!
দাসত্বের জন্য যুদ্ধ কোর না! স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ কর! সেন্ট লুকের সতেরো অধ্যায়ে
লেখা আছে, মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের রাজ্য বিদ্যমান, একটি মানুষ নয়, একটি জাতিও নয়, সমস্ত
মানুষের মধ্যে! তোমাদের মধ্যে! তোমাদের, এই জনতারই ক্ষমতা আছে, যন্ত্র সৃষ্টি করার
ক্ষমতা, সুখ-শান্তি প্রতিষ্ঠা করার ক্ষমতা! তোমাদের, এই জনতারই ক্ষমতা আছে জীবনকে মুক্ত
ও সুন্দর করে গড়ে তুলবার, জীবনকে একটি অসাধারণ যাত্রা হিসেবে গড়ে নেবার। গণতন্ত্রের
নামে, এসো আমরা সকলে সেই ক্ষমতা ব্যবহার করি। এসো সবাই একতাবদ্ধ হই। একটি নতুন পৃথিবীর
জন্য যুদ্ধ করি, একটি সভ্য পৃথিবী যেটা মানুষকে কাজ করার সুযোগ দেবে, যুবকদের দেবে
ভবিষ্যৎ আর বৃদ্ধদের নিরাপত্তা। এইসবের প্রতিশ্রুতি দিয়েই নরপশুগুলো ক্ষমতা পেয়েছে।
কিন্তু তারা মিথ্যা বলেছে! তারা প্রতিশ্রুতি পালন করে না। কোনদিনই করবে না! একনায়কেরা
নিজেদের মুক্ত করে কিন্তু মানুষকে দাসত্ব করায়। এসো এবার আমরা সেই প্রতিশ্রুতি পূরণের
জন্য সংগ্রাম করি! এসো আমরা এই পৃথিবীকে মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ করি! জাতীয়তার গন্ডি
ভুলে যাই! ভুলে যাই লোভ, ঘৃণা আর অসহিষ্ণুতা! এসো একটি যুক্তিবাদি পৃথিবীর জন্য লড়াই
করি, যেখানে বিজ্ঞান এবং উন্নয়ন প্রত্যেকটি মানুষকে পৌঁছে দেবে সুখের দ্বারপ্রান্তে।
সৈনিকেরা, গণতন্ত্রের নামে, এসো সবাই একতাবদ্ধ হই!
ইংরেজীঃ
I'm sorry, but I don't want to be an emperor. That's not my
business. I don't want to rule or conquer anyone. I should like to help
everyone if possible; Jew, Gentile, black man, white. We all want to help one
another. Human beings are like that. We want to live by each other's happiness,
not by each other's misery. We don't want to hate and despise one another. In
this world there is room for everyone, and the good earth is rich and can
provide for everyone. The way of life can be free and beautiful, but we have
lost the way. Greed has poisoned men's souls, has barricaded the world with
hate, has goose-stepped us into misery and bloodshed. We have developed speed,
but we have shut ourselves in. Machinery that gives abundance has left us in
want. Our knowledge has made us cynical; our cleverness, hard and unkind. We
think too much and feel too little. More than machinery, we need humanity. More
than cleverness, we need kindness and gentleness. Without these qualities, life
will be violent and all will be lost. The airplane and the radio have brought
us closer together. The very nature of these inventions cries out for the
goodness in men; cries out for universal brotherhood; for the unity of us all.
Even now my voice is reaching millions throughout the world, millions of
despairing men, women, and little children, victims of a system that makes men
torture and imprison innocent people. To those who can hear me, I say, do not
despair. The misery that is now upon us is but the passing of greed, the
bitterness of men who fear the way of human progress. The hate of men will
pass, and dictators die, and the power they took from the people will return to
the people. And so long as men die, liberty will never perish. Soldiers! Don't
give yourselves to brutes, men who despise you, enslave you; who regiment your
lives, tell you what to do, what to think and what to feel! Who drill you, diet
you, treat you like cattle, use you as cannon fodder. Don't give yourselves to
these unnatural men - machine men with machine minds and machine hearts! You
are not machines, you are not cattle, you are men! You have the love of
humanity in your hearts! You don't hate! Only the unloved hate; the unloved and
the unnatural. Soldiers! Don't fight for slavery! Fight for liberty! In the seventeenth
chapter of St. Luke, it is written that the kingdom of God is within man, not
one man nor a group of men, but in all men! In you! You, the people, have the
power, the power to create machines, the power to create happiness! You, the
people, have the power to make this life free and beautiful, to make this life
a wonderful adventure. Then in the name of democracy, let us use that power.
Let us all unite. Let us fight for a new world, a decent world that will give
men a chance to work, that will give youth a future and old age a security. By
the promise of these things, brutes have risen to power. But they lie! They do
not fulfill that promise. They never will! Dictators free themselves but they
enslave the people. Now let us fight to fulfill that promise. Let us fight to
free the world! To do away with national barriers! To do away with greed, with
hate and intolerance! Let us fight for a world of reason, a world where science
and progress will lead to all men's happiness. Soldiers, in the name of democracy,
let us all unite!
অরিন্দম গুস্তাভো বিশ্বাস
১৬ এপ্রিল ২০১৩
ঢাকা
১৬ এপ্রিল ২০১৩
ঢাকা