পৃষ্ঠাসমূহ

৭ এপ্রি, ২০১৫

ঈপ্সিত জীবন

বহুতল ভবনের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে আতিকুর। পায়ের স্যান্ডেলের ছিঁড়ে যাওয়া ফিতেটা দেখে নিচ্ছে বারবার। ময়লা সবুজ শার্টের বুকপকেটে বলপয়েন্টের কালির দাগ। গ্রাম থেকে আজ সকালেই রাজধানীতে এসেছে সে। এখন চৈত্রের প্রচণ্ড রৌদ্রের দুপুরে ঘেমে নেয়ে উঠে একটু জিরিয়ে নিচ্ছে দালানের ছায়ায়।

উচ্চস্বরে হর্ণ বাজিয়ে দারুণ গতিতে মোড় ঘুরে বেরিয়ে যাচ্ছে একটি মোটরবাইক। কালো রঙের হেলমেট পরা চালককে জড়িয়ে ধরে পেছনে বসে আছে জিনস্-টপস পরা সুন্দরী, কালো-সোনালী মেশানো সিল্কি চুলগুলো এলোমেলো হাওয়ায় উড়ছে। এমন দৃশ্য গঞ্জের চায়ের দোকানের টিভির পর্দাতেই শুধু দেখেছে আতিকুর, সামনাসামনি এই প্রথম। কুপির ক্ষীণ আলোয় ঘরের পোতায় বসে নিজেকে নায়ক বানিয়ে সিনেমার নায়িকাকে নিয়ে অগুনতিবার এমন মোটরসাইকেল ছুটিয়েছে সে! কিন্তু আজ যে একদম চোখের সামনে! বিস্ময়ের আকস্মিকতায় তার মুখ ঈষৎ ফাঁক হয়ে আসে। নিজের ভেতরে কেমন যেন ঈর্ষার জন্ম হয়। ইশ! জীবনটা যদি এমন হত তার! রোদেপোড়া ক্ষুধাকাতর শরীর তবু সম্ভাব্যতা বোঝে। মোটরবাইকটি অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে দ্রুত। কী এক অক্ষম অভিমানে সেদিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় আতিকুর।

কয়েক মুহূর্ত মাত্র! ধাতব সংঘর্ষের তীক্ষ্ম আওয়াজে চমকে ওঠে সে। এক ঝটকায় ফিরে তাকায়। রাস্তার মাঝে একটি বড় লাল রঙের গাড়ি আড়াআড়ি দাঁড়িয়ে। মোটরবাইকটি কাত হয়ে আছে ডানদিকে, পাশে কালো হেলমেট পরা চালক। নিথর মেয়েটি পড়ে আছে আরও কিছুটা দূরে, সোনালী চুলগুলো ছড়িয়ে আছে রাস্তার উপর। আশেপাশের লোকজন সবাই ছুটে যাচ্ছে সেদিকে। দারুণ শোরগোলে মুখরিত চারিদিক।

আতিকুর কেমন যেন হতবাক হয়ে পড়ে। অদ্ভুত এক ঘোরলাগানো গন্ধ নাকে এসে ধাক্কা দেয়। স্নায়ুগুলো যেন বিবশ হয়ে আসে।।


অরিন্দম গুস্তাভো বিশ্বাস
০৭ এপ্রিল ২০১৫
খুলনা