বিশ্বসাহিত্যের
ইতিহাসে ‘প্রেম’ই বোধকরি সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। এমনকি
যেসব সাহিত্যিকেরা কোনদিন প্রেম নিয়ে কিছু লেখেননি, তারাও সুযোগ বুঝে প্রেম
সম্পর্কিত দু’একটা মন্তব্য করতে
পিছপা নন। জর্জ বার্নার্ড শ ছিলেন ঠোঁটকাটা ধরণের মানুষ। তিনি তো সরাসরি বলেই দিলেনঃ
‘প্রেম হচ্ছে সিগারেটের মত, যার শুরু
আগুন দিয়ে আর শেষ পরিণতি ছাইতে’।
আমাদের রবিবাবু আবার প্রেমের জন্য সবকিছু করতেই রাজী ছিলেন। তিনি গাইলেনঃ ‘চরণে ধরিয়া তব কহিব প্রকাশি, গোপনে
তোমারে, সখা,
কত ভালোবাসি’। অবশ্য, এসব বড় বড় মনিষীদের কথা বোঝা বড়ই দুষ্কর, এনাদের কথার
মাঝে অন্তর্নিহিত অর্থ মাঝে মাঝে কিঞ্চিত বিপরীতার্থক হওয়াও বিচিত্র নয়।
যাই হোক,
বন্ধুমহলে একটা কথা খুব প্রচলিত আছে, যদিও এটা কার মুখনিঃসৃত বাণী তা আমার জানা
নেই। কথাটা হলঃ ‘প্রেম আর বিয়ে হল
দিল্লীকা লাড্ডু। খেলেও পস্তাতে হবে, না খেলেও পস্তাতে হবে’। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, প্রেমের কাছ
থেকে পালিয়ে যাবার কোন সম্ভাব্য রাস্তা মানবসন্তানদের জন্য খোলা নেই। এই ক্ষেত্রে
সাধারণ সিদ্ধান্তটি দাঁড়াচ্ছে- পস্তাতেই যখন হবে তখন দিল্লীকা লাড্ডু খেয়েই
পস্তানোই যথোপযুক্ত।
আমি আমার ক্ষুদ্র
মস্তিষ্কে যতটুকু বুঝি, প্রেম হল একটি বিশেষ ধরণের বন্ধুত্ব। এই বন্ধুত্বের দায়-দায়িত্ব
অন্যগুলোর তুলনায় অনেক বেশী। এই বন্ধুত্ব অপরিচিত কারও সাথে হাত মিলিয়ে করে ফেলার
মত সহজ নয়। এটিকে জয় করে নিতে হয় দীর্ঘদিনের বিশ্বাস আর একসাথে পথ চলার মধ্য দিয়ে।
আমি যখন কাউকে ভালবাসব তখন সে যেইরকম, সেই ভাল-মন্দ মিশানো মানুষটাকেই ভালবাসব।
শুধুমাত্র বাহ্যিক চেহারা, স্মার্টনেস দেখে অথবা আমি তাকে কেমনভাবে চেঞ্জ করলে আরও
ভাল করে তৈরী করতে পারি এই ধরণের মানসিকতা থেকে প্রেম না করাই উত্তম। আর প্রেম করা
মানে নিজেকে অন্যের কাছে বিক্রি করে ফেলা না, দু’জনের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। তাই একজনের ব্যাক্তিগত জীবন
যেমনঃ বিভিন্ন শখ, বন্ধু-বান্ধব, আড্ডা, ঘোরাফেরা এসবের উপর অন্যজনের প্রভাব
খাটানোর পক্ষপাতী আমি নই। সন্দেহ করাটা এড়িয়ে চলাই ভাল, কারণ কেউ আপনাকে ছেড়ে যেতে
চাইলে আপনি সন্দেহ করেও তাকে ধরে রাখতে পারবেন বলে মনে হয়না।
আমি যখন ছোট ছিলাম,
তখন আমার দিদা/নানী’র
ঘরে হাতে সেলাই করা একটা লেখা ফ্রেমে বাঁধান ছিল। পড়তে শেখার পরে কিছু না বুঝেই বহুবার
সেটা পড়েছি। আজ দিদাও নেই, সেই ফ্রেমই বা কোথায়! কিন্তু সেই লেখাটা রয়ে গেছে আমার
মনে, কথাটার অর্থ আজও আমাকে একটি অমূল্য দিকনির্দেশনা দেয়ঃ ‘রূপে ভুলে আঁখি, গুনে ভরে মন, এই কথা
চিরদিন রাখিও স্মরণ’।
অরিন্দম
গুস্তাভো বিশ্বাস
৩০ জানুয়ারী ২০১১
ঢাকা
সাপ্তাহিক বর্ষ ৩ সংখ্যা ৩৯, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ তে প্রকাশিত